১৪৫ দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ

52

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ওষুধ রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। স্বাধীনতার পর যেখানে দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি হতো, বর্তমানে সেখান দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৪৫টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রফতানি হচ্ছে। ওষুধ রফতানির প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫ শতাংশ। তাছাড়া বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিন দিন বাড়ছে। এজন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ওষুধ শিল্পকে বিশেষ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৪৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ওষুধ শিল্পে রফতানি আয় ছিল ৬০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৭৩ মিলিয়ন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৮২ মিলিয়ন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯৫ মিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয় হয় ৯৬ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার।
ওষুধ শিল্পে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রফতানির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করবে ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে এ আয় ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সরকার এবং এ খাতের বিনিয়োগকারীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ওষুধ শিল্পকে বিশেষ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সরকার ওষুধ রফতানিতে ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। তাছাড়া ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পাবেন আমদানিকাররা। উল্লেখ্য, উন্নত দেশে ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে ট্রেড রিলেটেড আসপেক্টস অব ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস (ট্রিপস) চুক্তি বাংলাদেশের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এ চুক্তির ফলে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলো সহজ শর্তে উন্নত দেশে ওষুধ রফতানি করতে পারবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাজারে ১০ শতাংশ জেনেরিক মার্কেট ধরার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। এখনই অন্তত ৫/৭টি কোম্পানি রয়েছে যারা বিশ্বের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। এ সংখ্যা দ্রুতই ২০-এ চলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশেই ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এ উদ্দেশে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রমবারের মতো ওষুধ শিল্পের ৪২টি অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিকালস ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) পার্ক গড়ে উঠছে। যা ২০২০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এখানে ২২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। ২০৩২ সালের মধ্যে এই শিল্প এলাকায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এরই মধ্যে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজেই আগামী দিনে দেশেই উৎপাদিত হবে ওষুধের কাঁচামাল। বাংলাদেশে এপিআই কারখানা চালু হলে তখন আর বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হবে না। বর্তমানে প্রতি বছর ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। দেশেই ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদিত হলে এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয় তা সাশ্রয় হবে এবং বিদেশেও সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ রফতানি করা যাবে। একই সঙ্গে দেশীয় বাজারেও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম অনেক কমে আসবে। বর্তমানে পাঁচ হাজার ব্র্যান্ডের ৮ হাজারেও বেশি ওষুধ উৎপাদন হয়। এ সংখ্যাও অনেকটাই বাড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের পোশাক খাতের মতো ওষুধ শিল্প খাতও প্রধান খাত হিসেবে রফতানি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।