সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান এর শপথ নিয়ে গণফোরাম-বিএনপি টানাপোড়ন, ভাঙতে পারে ঐক্যজোট

54

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে গণফোরামের নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্যের শপথ নিয়ে জোটে শুরু হয়েছে ব্যাপক টানাপোড়ন। নির্ধারিত নব্বই দিনের মধ্যে শপথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মৌলভীবাজার-২ থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান। যদিও বিএনপি ও গণফোরামের একাংশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বারবার আপত্তি আসছে। ঐক্যফ্রন্ট সূত্র বলছে, দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই শপথের পক্ষে। ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া সংসদের প্রথম অধিবেশনের আগেই তাদের শপথ নেয়ার পক্ষে একমত অনেকেই। এজন্য গণফোরামের পক্ষে বিএনপিকে বোঝানোরও চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। তবে শপথ না নেয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। দলের আপত্তির মুখে গণফোরামের দুই নেতা শপথ নিলে শেষ পর্যন্ত জোটে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে এমন কথাও জানিয়েছেন উভয় দলের নেতারা। ৩০ জানুয়ারি গণফোরামের একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এমনকি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। এরমধ্যে সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকও গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই সাংসদের শপথ নেয়ার আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা সুলতান মনসুর গণফোরামের প্রার্থী হলেও নির্বাচিত হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে। অপরদিকে সিলেট-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার প্রার্থিতা হাইকোর্ট বাতিল করলে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে সমর্থন দেয় বিএনপি। নির্বাচনের পর থেকেই তাদের শপথ নিয়ে রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম হয়। শুরুতেই নির্বাচিত দুজনেই শপথ নেয়ার পক্ষে একমত ছিলেন। কিন্তু দল ও জোটের বিরোধিতার এক পর্যায়ে তারা পিছু হটেন। নানা নাটকীয়তা শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। তিন শ’ আসনের মধ্যে আটটিতে জয় পায় নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চার প্রার্থীরা। এরমধ্যে ৬ জন সরাসরি বিএনপির নেতা। বাকি দু’জন গণফোরামের। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এমপিদের শপথ গ্রহণের বিষয়টি উভয় জোটকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সোমবার নির্বাচিত এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দু’জন শপথ নেব। তবে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। এখনও সময় আছে। ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিলেই হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে সুলতান মনসুর বলেন, আমি অসুস্থ, হাতে ফ্র্যাকচার। ব্যান্ডেজ বাঁধা। সুস্থ হতে এখনও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। শপথের তো এখনও বেশ সময় আছে। বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। ঐক্যফ্রন্টও সিদ্ধান্ত নেবে। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তো আলাদা আলাদা দল। আমাদের সিদ্ধান্ত ‘অবশ্যই পজিটিভ’ হবে।
ধানের শীষ প্রতীকে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আইনী কোন সমস্যা হবে কি-না? বলেন, না, এটা কোন সমস্যা হবে না। বিএনপি যদি সংসদে যেত, আর আমি যদি তাদের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দিতাম সেক্ষেত্রে সমস্যা হতো। এখন যেহেতু বিএনপি সংসদে যাচ্ছে না। তাই আমার শপথে কোন সমস্যা হবে না। আমি তো গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি।
সুলতান মনসুর বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছেন সংসদে কথা বলার জন্য। তাদের জন্য কাজ করতেই আমাকে সংসদে যেতে হবে। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ) আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে জয় পান ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। ইতোপূর্বে ধানের শীষ প্রতীকে কোন প্রার্থী ওই আসনে কখনও বিজয়ী হতে পারেননি। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে যখন বিএনপি সরকার গঠন করেছিল তখনও এ আসনে জামানত হারায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। এবার এই আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হাড্ডাহাডি লড়াই করে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ ত্যাগী দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। উল্লেখ্য, ’৯৬ সালে সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের নেতা মোকাব্বির খান বলেন, আমাদের দলের (গণফোরাম) প্রেসিডেন্ট চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। সেখানে শপথ বিষয়েও আলোচনা হবে। ‘তবে এ বিষয়ে (শপথ) আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। ফোরামের সিদ্ধান্তও ইতিবাচকই হবে বলে আশা করি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। তবে বিএনপি কী করবে সেটা তাদের বিষয়।