ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দিবসের ৫০ বছর পূর্তি আজ

59

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানই ছিল মূলত মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘ড্রেস রিহার্সেল’। আগরতলা মামলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের সব ব্যবস্থা করে ফেলে পাকি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। ফুঁসে উঠে জাগ্রত ছাত্রসমাজও। ঊনসত্তরের ১৭ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজ ১১ দফা কর্মসূচী দিলে শুরু হয় উত্তাল গণঅভ্যুত্থান। ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে সারাদেশে আন্দোলনের আগুন জ্বলে ওঠে। শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয় এইদিন।
ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বুধবার কাছে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক, তৎকালীন ডাকসু ভিপি, বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি। বলেন, মতিউর-মকবুল-রোস্তমসহ অসংখ্য শহীদের বুকের তাজা রক্ত সারাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি করে। ছাত্র সমাজের এই গণআন্দোলনে বাংলার মানুষ যোগ দিয়েছিল। ওই গণঅভ্যুত্থানের মুখেই পতন ঘটে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের। আর ছাত্র সমাজের তীব্র আন্দোলনের মুখেই ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি লাখো মানুষের সমাবেশে ছাত্রসমাজ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। মূলত ঊনসত্তরের এদিনে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। তিনি বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুব খানের পতনের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রাম, ’৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন প্রিয় স্বাধীনতা।
আজ সেই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবসের ৫০ বছর পূর্তি দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান এক তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালী জাতি অর্জন করে হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন মহান স্বাধীনতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী স্বৈরশাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। এতে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্রতর হয়। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনকে নস্যাত করার হীনউদ্দেশে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে। এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে।
পাকিস্তানী সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষে ’৬৯ সালের এদিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান। আর শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয় এইদিনে। শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়।
জনতার রুদ্ররোষ এবং গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পতন ঘটে আইয়ুব শাহীর স্বৈরতন্ত্রের। অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আজও দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি একটি ঐতিহাসিক দিন। দিনটি গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালীর মুক্তি সনদ ৬ দফা, পরবর্তীকালে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। পেয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
দিবসটি উপলক্ষে নানা সংগঠন নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী।