কাজিরবাজার ডেস্ক :
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনার জন্য প্রায় তিন হাজার ৩শ সেনাসদস্য মোতায়েন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ হলেও সীমিত পরিসরে মোট ছয়টি আসনকে দ্বৈবচয়ণের ভিত্তিতে বেছে নিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
এক্ষেত্রে রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২, ঢাকা-৬ ও ১৩ এবং চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এসব আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৫৪টি।
সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তার জন্য থাকবে মোট ২ হাজার ৫৩৫ জন সেনাসদস্য। প্রতি কেন্দ্রের জন্য গঠিত একেকটি টিমে থাকবেন সশস্ত্র বাহিনীর তিনজন করে সদস্য। এদের মধ্যে একজন করপোরাল, দু’জন ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক বা সমমর্যাদার সেনাসদস্য।
তাদের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ কারিগরি টিম। এই টিমে থাকবেন মোট ৫০৭ সেনাসদস্য। প্রতি পাঁচ কেন্দ্রের জন্য গঠিত প্রতি টিমে থাকবেন তিনজন করে সেনাসদস্য। এদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট, দু’জন করপোরাল অথবা ল্যান্স করপোরাল বা সৈনিক সমমর্যাদার সেনাসদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
ভ্রাম্যমাণ টিমের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ তদারকি টিম। প্রতি ১৫টি কেন্দ্রের জন্য একটি টিম থাকবে। এক্ষেত্রে মোট ১৬৯ জন্য সেনাসদস্য নিয়োজিত থাকবেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন একজন জেসিও, দু’জন সার্জেন্ট অথবা ল্যান্স করপোরাল বা সমমর্যাদার সেনাসদস্য।
এদের ওপরে কাজ করবে প্রতি ৫০ কেন্দ্রের জন্য গঠিত একটি করে মোট ১৭টি টিম। আর প্রতি টিমে তিনজন করে মোট ৫১ জন সেনাসদস্য কাজ করবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন মেজর অথবা ক্যাপ্টেন অথবা লেফটেন্যান্ট, একজন জেসিও এবং করপোরাল অথবা ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক সমমর্যাদার সেনাসদস্য।
এই টিম সহকারী রিটার্নিং অফিসার বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা কার্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
আর সবগুলো টিমের কাজ তত্ত্বাবধায়ন করবে উচ্চ পর্যায়ের আরেক টিম। প্রতি আসনে পাঁচজন করে সেনাসদস্য নিয়ে এই টিম গঠিত হবে। অর্থাৎ, মোট ছয়টি আসনে ৩০ জন সেনাসদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এতে একজন মেজর, দু’জন ক্যাপ্টেন অথবা লেফটেন্যান্ট, একজন জেসিও অথবা সার্জেন্ট এবং একজন করপোরাল অথবা ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক সমমর্যাদার সদস্য।
এই টিম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
ইভিএম পরিচালনা করা হবে দু’টি কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে। যার একটি থাকবে নির্বাচন কমিশনে আর একটি থাকবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে।
সেনাসদস্যরা কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কন্ট্রোলরুমের অধীনে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কন্ট্রোলরুম কাজ করবে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোলরুমের অধীনে।
কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি টিমের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সফল করতে ১৫ ডিসেম্বর সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করার বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে একটি চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শেষে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সাপেক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ সেনানিবাসে ফিরে যাবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এ সংক্রান্ত চিঠিটি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন। যার অনুলিপি সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, তিন বাহিনীর প্রধানদের একান্ত সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে প্রয়োজন সাপেক্ষে জনবল সংখ্যা পরিবর্তন করার কথাও উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন।
ইভিএমের ছয়টি আসনে মোট ভোটার ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে প্রতি ইভিএমে ৪৫০ জনের বেশি ভোট না নিতে। এক্ষেত্রে ৬ আসনে প্রায় ৪ হাজার ৭শ ৫০টির মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। সমসখ্যক ইভিএম ব্যাকআপ হিসেবেও রাখবে নির্বাচন কমিশন। সবমিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এবারে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সেনাসদস্যদের মোতায়েন করা হবে। তবে তারা ভোটের মাঠ নামবে ২৪ ডিসেম্বর। মোতায়েন থাকবে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।