ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে থাকবে না সেনাবাহিনী

88

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইসিতে দায়ের করা বিএনপির বেশিরভাগ অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অনেকের নামে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। কিন্তু তারা আত্মগোপনে থাকায় তখন গ্রেফতার করা যায়নি। নির্বাচন উপলক্ষে এদের অনেকেই প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে বলে মন্তব্য করেছেন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ। ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামালের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তার বিষয়ে কেউ ইসিতে অভিযোগ করেননি।
শুক্রবার বিকেলে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন এসব মন্তব্য করেন। সকালে মিরপুরে ড. কামালের গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ৩শ’ আসনে নির্বাচন হচ্ছে। নেতিবাচক যেসব ঘটনা ঘটছে, তা তুলনামূলক কম। তারপরও পুলিশকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কেউ ইসিতে অভিযোগ করেনি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিএনপির অভিযোগের বেশিরভাগেরই সত্যতা নেই। যেসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, সেগুলো অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের হয়রানি না করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়গুলো ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে ইসিতে প্রতিবেদন পাঠাবে। কমিশন থেকেও পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সিনিয়র কোন নেতাকে যেন হয়রানি করা না হয়। কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ৭ দিন আগে সব আসনে ব্যালট পেপার পৌঁছে যাবে। ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুধু মাঠ পর্যায়ে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ বাকি রয়েছে। প্রস্তুতির মধ্যে আরেকটা বিষয় রয়ে গেছে, তা হলো ব্যালট পেপার তৈরি। নির্বাচনের ৭ দিন আগে ৩শ’ আসনে আমরা ব্যালট পেপার পৌঁছাতে সক্ষম হব।
সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট টিম যাচ্ছে জেলায় জেলায় : আজ শনিবার ছোট ছোট টিম আকারে জেলায় জেলায় যাচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মূলত নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো ও নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য জেলায় জেলায় সশস্ত্র বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে ২৪ তারিখ থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী।
কমিশন সচিব বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিন সেনা সদস্য মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ছয় দিন আগে মোতায়েন হবে সেনাবাহিনী। ভোটের পরও দু দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোয় থাকবেন তারা। ইসির সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী হাকিমও চেয়ে ইসি যে চিঠি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে আচরণবিধি প্রতিপালনে ভোটের দু’দিন আগে থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত নির্বাহী হাকিম নিয়োগ করা প্রয়োজন। সশস্ত্রবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসারের মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী হাকিম নিয়োগের প্রয়োজন হবে। গত ৮ নবেম্বর তফসিল ঘোষণার সময়ই সিইসি বলেছিলেন, নির্বাচন চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে-প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকেও সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব : নির্বাচনে সেনাবাহিনী কি ধরনের দায়িত্ব পালন করবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ইসির এক কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতি জেলা/উপজেলা/ মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা দেবেন তারা। রিটার্নিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদা ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না তারা।