স্টাফ রিপোর্টার :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে বিএনপি দুই প্রার্থীর একজন খন্দকার মুক্তাদির নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য বলছে, কোটি কোটি টাকার ঋণে ডুবে আছেন তিনি।
হলফনামা অনুসারে, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নামে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৭.৯৩ টাকা, এক্সিম ব্যাংকে ৮৭ লাখ ৩১৪১.৬৭ টাকা এবং সিটি ব্যাংকে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৭.৮৩ টাকার একক ঋণ রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর এবং এক্সিম ও সিটি ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে গেল ২৬ নভেম্বর।
খন্দকার মুক্তাদির ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লি. এই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছেন। এর কোনোটির তিনি চেয়ারম্যান, কোনোটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা পরিচালক। এসব পদে থেকে তাঁর নামে ট্রাস্ট ব্যাংকে ১৭২ কোটি ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার ১৬.৫২ টাকা, এক্সিম ব্যাংকে ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬১.২৫ টাকা, ব্র্যাংক ব্যাংকে ৯ কোটি ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৭ টাকা, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩১ হাজার ৫৮৯.৪৩ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে ৫ কোটি এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৬১৫ টাকা ঋণ রয়েছে। এসব ঋণ ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত কয়েক দফায় পুনঃতফসিল হয়েছে।
শুধু ঋণই নয়, খন্দকার মুক্তাদিরের নামে বিপুল অঙ্কের দেনা বা দায়ও রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে ‘ব্যবসায়িক ঋণ’ বাবদ তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠানের দায় আছে ৪ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫.৭২ টাকা ও ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৮২.২১ টাকা। এছাড়া এক্সিম ব্যাংকে ‘ব্যবসায়িক ঋণ’ হিসেবে দায় আছে ৮৭ লাখ ৩ হাজার ১৪১.৬৭ টাকার, সিটি ব্যাংকে ‘গাড়ির জন্য ঋণ’ বাবদ ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৪.৭৯ টাকা এবং ‘ব্যক্তিগত ঋণ’ বাবদ ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৩.০৪ টাকার দায় আছে মুক্তাদিরের।
হলফনামার তথ্য বলছে, খন্দকার মুক্তাদিরের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে ৫টি। এর মধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী থানায় ২টি, জালালাবাদ, শাহপরান ও এয়ারপোর্ট থানায় একটি করে মামলা আছে। সবগুলো মামলাই আদালতে বিচারাধীন। তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা ছিল। উভয় মামলার চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
খন্দকার মুক্তাদির তিনটি আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি সুতা রং করার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ক্যামিকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ তার স্ত্রীর আয় ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ব্যবসায় তাঁর আয় ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৬.৫৬ টাকা এবং স্ত্রীর আয় ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে খন্দকার মুক্তাদিরের কাছে নগদ টাকা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫১০ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে নগদ ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯০ টাকা রয়েছে। সিটি ব্যাংকে তাঁর নামে ৩৬ হাজার ৩১০.৭৩ টাকা, ব্যাংক এশিয়ায় ৬ লাখ ৬৪ হাজার ১২৩.৪৮ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর নামে এবি ব্যাংকে ৫০ হাজার ১৩১ টাকা জমা আছে।
বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানীর শেয়ার হিসেবে খন্দকার মুক্তাদিরের নিজের নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা, তিন কোটি ২ লাখ টাকা এবং ১১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ টাকার শেয়ার আছে। তাঁর স্ত্রীর নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে তিন কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ৮৩০ টাকা, তিন কোটি ২ লাখ টাকা এবং এক লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার শেয়ার আছে।
মুক্তাদিরের নিজের নামে দুটি জিপ আছে, যেগুলোর মূল্য ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা। নিজের নামে বিয়ের সময় ‘দান হিসেবে প্রাপ্ত’ স্বর্ণ আছে ৫০ ভরি (মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা), স্ত্রীর নামে বিয়ের সময় ‘দান হিসেবে প্রাপ্ত’ ৫০ ভরি স্বর্ণ (মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা) আছে। তাঁর নামে ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাব এবং স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকার আসবাব রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে মুক্তাদিরের নামে ‘উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত’ ০.১০ একর কৃষি জমি আছে, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ঢাকার কাফরুল থানা এলাকায় তাঁর ৩৭.৫ শতাংশ অকৃষি জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা), সিলেট নগরীর সেনপাড়ায় ৫০ শতাংশ জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা), ময়মনসিংহের ধামসুরে ১৯৫.৭৪ শতাংশ জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা), ময়মনসিংহের হাজিরবাজার এলাকায় ৯১.৫ শতাংশ জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা), গুলশানে ৫ কাটা ভূমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা) এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ০.১১৩৫১২৫ একর জমি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা।
মুক্তাদিরের স্ত্রীর নামে ঢাকার গুলশানে প্রতিটি ৩২৭২.২৮ বর্গফুট করে দুটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট আছে। এই দুই অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটির মূল্য ‘অর্জনকালীন সময়ে’ ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।