স্পোর্টস ডেস্ক :
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা আলো জ্বালালেন। অভিষেক ইনিংসেই ৫ উইকেট তুলে নেয়া নাঈম হাসানের বিশ্বরেকর্ড গড়া বোলিংয়ে সেই আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আবার তা নিভে যাওয়ার উপক্রম হলো। ব্যাটসম্যানরা আলো জ্বালানো শুরু করলেন, তারাই অন্ধকারের পথ তৈরি করলেন। এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ১৩৩ রানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে হাতে আছে ৫ উইকেট। মুশফিক (১১*), মিরাজ (০*), মাহমুদুল্লাহ, নাঈম, তাইজুল, মুস্তাফিজের ওপরই এখন সব নির্ভর করছে। টেস্ট বাঁচাতে এখন স্কোরবোর্ড মজবুত করা ছাড়া গতি নেই।
উইকেট যে স্পিননির্ভর হয়ে গেছে তা দ্বিতীয়দিনের শুরু থেকেই বোঝা গেছে। এই দিনে দুই দলের মোট ১৭ উইকেট পড়েছে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ২ উইকেটের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পড়েছে ১০ উইকেট। সবগুলো উইকেটই নিয়েছেন দুই দলের স্পিনাররা। বাংলাদেশ ৩২৪ রান করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ২৪৬ রান করে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ৫৫ রান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়দিনও শেষ হয়।
প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত প্রথমদিনের ৩১৫ রানের সঙ্গে দ্বিতীয়দিন আরও ৯ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। দিনের শুরুতে ২৮ বলের মধ্যেই খতম হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৩২৪ রান করে। এই সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনার ওয়ারিক্যান টপাটপ নাঈম (২৬) ও মুস্তাফিজকে আউট করে দেন। তাইজুল ইসলাম ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। দ্বিতীয়দিন থেকেই যে চট্টগ্রাম টেস্টে স্পিনারদের দাপট দেখার মিলবে তা সকালের শুরুতেই আভাস মিলে। বাংলাদেশ স্পিনাররাও সেই সুযোগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের ওপর চড়াও হন। ৮৮ রানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫ উইকেট তুলে নেয়া যায়। দলের ২৯ রানে পাওয়েলকে আউট করে দেন তাইজুল। শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের পালা। এরপর নিজের প্রথম ওভার করতে এসে ২ উইকেট শিকার করে নেন সাকিব। পেতে পারতেন একই ওভারে আরেকটি উইকেট। কিন্তু এ্যামব্রিসের ক্যাচটি হাতছাড়া হয়। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে বোলিংটা একটু দেরিতে পেলেও উইকেট দ্রুত নিতে ভুল করেননি নাঈম। তিনিও ২ উইকেট নেন। ৮৮ রানের মধ্যে পাওয়েল, হোপ, ব্রেথওয়েট, চেস ও এ্যামব্রিসের আউটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিপদে পড়ে যায়।
তখন মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হয়তো ১৫০ রানেই আটকিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটেই হেটমায়ার ও ডওরিচ মিলে ৯২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এই জুটিকে সহজেই আটকানো যায়নি। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানও ১০০ হয়ে ১৫০ অতিক্রম করে ১৮৮ রানে চলে যায়। এমন সময় হেটমায়ারকে (৬৩) আটকান মিরাজ। তাতে করে স্বস্তিও আসে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরবোর্ডে অল্প অল্প করে রান জমা হয়ে ২৪৬ রান হয়। ডওরিচ শেষ পর্যন্ত ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন। নাঈম অভিষেক ইনিংসেই ৫ উইকেট শিকার করে নেন। ১৮ বছরের আগে প্রথম কোন বোলার সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েন। তার বোলিংয়ের সঙ্গে ৩ উইকেট নেয়া সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ ৭৮ রানে এগিয়ে যায়। কি সুন্দর খেলছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা যেমন উজ্জ্বল ছিলেন, বোলাররাও নিজেদের মেলে ধরেন। আলো ছড়াতে থাকেন। চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ে বড় আশাও জাগে। কিন্তু সেই আশা যেন হতাশায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা জেগে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে যে দ্বিতীয়দিন শেষ হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডটা খুবই রোগা (৫/৫৫) অবস্থায় আছে। স্পিনার ওয়ারিক্যান ও চেস দুটি এবং বিশু একটি উইকেট নেন। এ তিন স্পিনারের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন ইমরুল, সৌম্য, মুমিনুল, সাকিব ও মিঠুন। এখন ব্যাট হাতে আছেন মুশফিক ও মিরাজ। এরপর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাহমুুদুল্লাহও আছেন। বাকি তিনজন বোলার। প্রথম ইনিংসে নাঈম ও তাইজুল ভাল করেছেন। কিন্তু স্পিন ফাঁদ যেভাবে ফেলা আছে তাতে মুশফিক, মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহকেই যা করার করতে হবে। কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। কোনভাবে বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেই চট্টগ্রাম টেস্ট হাতছাড়া হতে পারে। টার্গেট আড়াই শ’ রান হলেও সুবিধা করা সম্ভব। স্পিনারদের দাপটে ম্যাচ বের করে নেয়া সম্ভব। কিন্তু কোনভাবে যদি দুই শ’ রানের নিচেই টার্গেট থাকে, তাহলে বিপদ আসতে পারে। ব্যাটসম্যানরা আলোর পর অন্ধকারের পথ তৈরি করেছেন। সেই অন্ধকারও এখন তাদেরই দূর করতে হবে। তা পারবেন মুশফিক, মিরাজ, মাহমুদুল্লাহরা?