কমলগঞ্জে এসএসসি’র ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ ॥ জিম্মি পরীক্ষার্থীরা, মানা হচ্ছে না বোর্ডের নির্দেশনা

62

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার রশিদ ছাড়াই অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ফরম ফি’র সঙ্গে বকেয়া বেতন, কোচিং, মডেল টেস্টের নামে বাড়তি কোনো টাকা আদায় করা যাবে না। বকেয়া বেতন আদায় করতে হলে নির্বাচনী পরীক্ষার আগে করে নিতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এসএসসি পরীক্ষার ফরমপূরনে বোর্ড নির্ধারিত ফি ছাড়া ও বিভিন্ন খাত দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোচিং, জানুয়ারী-ফেব্র“য়ারী মাসের বেতন, উন্নয়ন ফি সহ আনুষঙ্গিক খাত দেখিয়ে ফি ধার্য্য করে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে ইচ্ছে মতো ফি আদায় করার ফলে পরীক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মানবিক শাখায় নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ১ হাজার ৭শ’ ২৫ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখায় ১ হাজার ৮শ’ ৪৫ টাকা হারে ফি আদায় করে বোর্ডে জমা দেয়ার কথা। তবে উপজেলার ২১টি বিদ্যালয়ে ফরম পূরণের নির্ধারিত ফি ছাড়াও কোচিং এর জন্য ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, জানুয়ারী ও ফেব্র“য়ারী মাসের বেতন, অনলাইনে কার্যক্রম, প্রিন্ট-ফটোষ্ট্যাট, বোর্ডে আসা যাওয়ার খরচ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৬শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫শ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে ফরম পূরণে বাড়তি টাকা আদায়ে দুদকের সতর্কতার কারণে কৌশল হিসাবে প্রতিষ্ঠান সমূহ বোর্ডের টাকা ও দু’মাসের বেতন, কোচিং ফি হিসাবে আলাদাভাবে প্রকাশ করছে। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার রশিদপত্রও দেয়া হচ্ছে না।
কয়েকজন অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী বলেন, ফরম পূরণের টাকার সাথে কোচিং, দুই মাসের বেতন সহ অন্যান্য নানা খাত দেখিয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থীর পিতা বলেন, ‘বোর্ডের ফি’র বাহিরে আরও অতিরিক্ত সহ¯্রাধিক টাকা যেন মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলগঞ্জের একাধিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। রসিদ চাইলে পরবর্তীতে দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক।
কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ফরম পূরণে ২ হাজার ৬শ’ টাকা, বিএএফ শাহীন কলেজ শমশেরনগর ৫ হাজার ৫শ’ টাকা, তেঁতইগাও রশিদ উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৮শ’ টাকা, পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৮শ’ টাকা, মুন্সীবাজার কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৬শ’ টাকা, শমসেরনগর এএটিএম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৮শ’ টাকা, হাজী মো: উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ হাজার টাকা, এম.এ.ওহাব উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৫শ’ ৫০টাকা, পদ্মা মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৫শ’ টাকা, কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৬শ’ টাকা, মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৬শ’ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে।
বাড়তি টাকা আদায় বিষয়ে জানতে চেয়ে কমলগঞ্জ মডেল সরকারি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রনেন্দ্র কুমার দেব, পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ফয়েজ আহমদ, কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র কুমার পাল সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলেন, নির্ধারিত ফি ছাড়া পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য কোচিং ফি ও দুই মাসের বেতন আলাদাভাবে নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া অনলাইন ও বোর্ডে আসা যাওয়ার যে খরচ হবে সেটিও এখান থেকে ব্যয় করা হবে।
অভিযোগ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুন্নাহার পারভীন বলেন, ফরম পুরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে বলে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিয়ে গুরুত্বসহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।