কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাঘা ইউপির রস্তমপুর ব্রীজের নীচ থেকে গত ৮ অক্টোবর ভোরে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত নামা লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়া লাশটি কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির গোরকপুর গ্রামের ফয়জুর রহমানের পুত্র মাওলানা মুহিবুর রহমান (৫০) এর। গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ মুহিবুর রহমানের লাশের পরিচয় সনাক্ত করতে না পেরে ময়না তদন্তের পর ৮ অক্টোবর অজ্ঞাতনামা বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দাফন করে। মুহিবুর রহমানের পরিচয় শনাক্তের পর তাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের এসআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শংকর দাসের রবিবার বিকেলের দিকে নিহতের বায়রা কানাইঘাট দলকিরাই গ্রামের সিরাজুল হকের পুত্র সিলেটের শাহপরান এলাকায় বসবাসরত রিয়াজ উদ্দিন কে আটক করেন। অপর দিকে কানাইঘাট থানা পুলিশ গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিহত মুহিবুর রহমানের শ্বাশুড়ী কানাইঘাট বানীগ্রাম ইউপির নিজ বাউরভাগ গ্রামের রইছ উদ্দিনের স্ত্রী পিয়ারা বেগম সালেহা (৬৮) কে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে আটক করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে পিয়ারা বেগম ও তার মেয়ের জামাই রিয়াজ উদ্দিন কে মুখামুখি করে কানাইঘাট থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জানা যায় গোলাপগঞ্জের রস্তমপুর ব্রীজের নিচ থেকে গত ৮ অক্টোবর গলায় গামছা পেঁচানো রক্তাক্ত অবস্থায় শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যার স্বীকার মুহিবুর রহমান গত ৪ অক্টোবর তার নিজ বাড়ী গোরকপুর গ্রাম থেকে সকাল ৯টার দিকে সিলেট শহরে তার বায়রা রিয়াজ উদ্দিনের বাসায় যাওয়ার জন্য ফুফা শফিকুল হক কে সাথে নিয়ে বের হন। দুপুরে মুহিবুর রহমান তার ফুফা শফিকুল হক নিয়ে বায়রার বাসায় শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগমের উপস্থিতিতে খাওয়া দাওয়া করেন। এর পর ঐ দিন ফুফা শফিকুল হক তার নিজ বাড়ীতে ফিরে আসলে ও মুহিবুর রহমান বায়রার বাসায় থেকে যান। এর পর থেকে তার কোন ধরনের সন্ধান না পেয়ে পরিবারের লোকজন মুহিবুর রহমানের শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম, বায়রা রিয়াজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন মুহিবুর রহমান ৪ অক্টোবর বিকেলের দিকে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। ভাই মুহিবুর রহমানের কোন সন্ধান না পেয়ে গত ২৪ অক্টোবর বুধবার কানাইঘাট থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী দায়ের করেন তার ভাই সাহাব উদ্দিন। থানা পুলিশের এসআই সুরঞ্জিত নিখোঁজ সাধারন ডায়রীর সূত্র ধরে জানতে পারেন গত ৮ অক্টোবর গোলাপগঞ্জের বাঘায় এক ব্যক্তির অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে মুহিবুর রহমানের পরিবারের লোকজন কে থানায় ডেকে এনে সেই অজ্ঞাত নামা লাশটি এসআই সুরঞ্জিত লাশের ছবি তাদের দেখালে গোলাপগঞ্জ পুলিশের হাতে অজ্ঞাতনামা উদ্ধার হওয়ার লাশটি মুহিবুর রহমানের বলে তার পরিবারের লোকজন সনাক্ত করেন। এই সূত্র ধরে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের এসআই নিহত মুহিবুর রহমানের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শংকর দাস এবং কানাইঘাট থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে মুহিবুর রহমান কে হত্যার ঘটনায় সন্দেহে তার শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম ও বায়রা রিয়াজ উদ্দিন কে গতকাল রবিবার রাতে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুনু মিয়া জানিয়েছেন। দুবৃর্ত্তদের হাতে নিহত মুহিবুর রহমান গত ১৫ অক্টোবর সৌদি আরব প্রবাসে যাবার কথা ছিল। মুহিবুর রহমানের স্ত্রী কানাইঘাট মহিলা কলেজের অফিস সহকারী সাবানা ইয়াসমিন শাম্মী অনুমান ৯ মাস পূর্বে মারা যান। মুহিবুর রহমানের ৩ সন্তানের জনক। মুহিবুর রহমানের ভাই সাহাব উদ্দিন সহ আত্মীয় স্বজনরা জানিয়েছেন মুহিবুর রহমানের স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে তার শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম তার আর এক মেয়ের সাথে মুহিবুর রহমান কে বিয়ে দিতে চেয়ে ছিলেন। এতে মুহিবুর রহমান রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম ও বায়রা রিয়াজ উদ্দিন পরিকল্পিত ভাবে মুহিবুর রহমান কে হত্যা করেছে।