বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সারাদেশে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে এ্যাম্বুলেন্স, ওষুধের গাড়ি, বিদেশ যাত্রী, পরীক্ষার্থীর যানবহনও ছাড় দিচ্ছেন না পরিবহন শ্রমিকরা। আর তারই বলি হতে হলো মৌলভীবাজারের বড়লেখার সাত দিন বয়সী এক কন্যা শিশু।
রবিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিরোধে উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের চান্দগ্রাম এলাকায় আটকে পড়া এ্যাম্বুলেন্সে মারা যায় শিশুটি।
শিশুর পরিবারের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার সাতদিনের শিশুকন্যাকে অসুস্থ অবস্থায় রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকালের দিকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। শিশুর অভিভাবকরা এ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ১০টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার পুরাতন বড়লেখা বাজার, দাসেরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এ্যাম্বুলেন্সটি পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে।
এ্যাম্বুলেন্সটি চান্দগ্রাম নামক স্থানে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি আটকে চালককে মারধর করেন। প্রায় দেড়ঘন্টা এখানে এ্যাম্বুলেন্সটি আটকা থাকে। দুপুর দেড়টার দিকে গাড়ি ছাড়া পেলে শিশুটিকে পাশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছে শিশুটির পরিবার।
মৃত শিশুর চাচা আকবর আলী ওরফে ফুলু মিয়া রবিবার (২৮ অক্টোবর) বলেন, ‘আমার ভাতিজী মায়ের দুধ টানের না। এজন্য তাকে বড়লেখা হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তাররা তাকে সিলেট ওসমানীতে রেফার করেন। সাথে সাথে এ্যাম্বুলেন্স ডেকে সিলেট রওনা দিই। প্রথমে দাসেরবাজারে গাড়ি আটকে চালককে মারধর করছে। পরে অনুরোধ করলে গাড়ি ছাড়ে। চান্দগ্রামে আবার গাড়ি আটকে গাড়ির চাবি নিয়ে যায়। ৫০০ টাকা দাবি করে। প্রায় দেড়ঘন্টা এখানে আটকে ছিলাম। এখানে মেয়েটা মারা গেছে। বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। পরে বড়লেখা থানায় গিয়ে অভিযোগ দিয়েছি।’
সিএনজি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন বড়লেখা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন রবিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বলেন, ‘সিএনজি শ্রমিকরা যেখানে যেখানে ব্যারিকেড দিয়েছিল। সকালেই তা তুলে দিয়েছি। এ্যাম্বুলেন্স আটকানোর সাথে কোনো সিএনজি শ্রমিক জড়িত না।’
এ বিষয়ে বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম বলেন, ‘একটি শিশু মারা যাওয়ার কথা লোকজন বলাবলি করছে। সিলেটে যাওয়ার পথে রাস্তায় আটকা পড়ে মারা গেছে। এরকম কথা উঠেছে। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’