মাদক ব্যবসা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ চাই

41

সমাজকে মাদকমুক্ত করার উদ্দেশ্যে জোরেশোরে ইয়াবাবিরোধী অভিযান শুরু করেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রায় ৩০০ জন নিহত এবং ৬০ হাজার জন গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযান এখনো চলছে কিন্তু এর মধ্যেই ইয়াবার বেচাকেনাও চলছে। ফলে এ অভিযানে মাদক নির্মূল হবেই এ আশা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সমস্যাটি কোথায়? মাদকবিরোধী অভিযানে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, অভিযানে সব মহল আন্তরিক ভূমিকা পালন করেনি। তাই ফল আশাব্যঞ্জক নয়।
একপর্যায়ে বাহিনীগুলোর কাজের সমন্বয় ও অভিযানের মূল্যায়ন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। গডফাদাররা বলতে গেলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে। কারণ তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে তাদের অর্থবিত্তের উৎস সন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল। সেটাও হচ্ছে না। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, পুলিশের মনোযোগ এখন সেদিকে। এ মুহূর্তে মাদক নির্মূল তাদের অগ্রাধিকার নয়।
মাদক নির্মূল অভিযানে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব-পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ জড়িত। মূল কার্যক্রমের মধ্যে ছিল সীমান্তপথে মাদকপাচার বন্ধ করা এবং ব্যবসায়ীদের তালিকা করা। কিন্তু বাস্তবে সীমান্তপথে মাদকের পাচার বন্ধ হয়নি। স্থলপথ ও জলপথ দুই পথেই ইয়াবা আসছে। বিজিবির হিসাবে গত বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে প্রায় সাড়ে ৪০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এতেই স্পষ্ট, অভিযান চালিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি। কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তের ৬৪টি স্থান দিয়ে ইয়াবা আসে। বিভিন্ন নৌযানে করেও আসছে। যত ইয়াবা ধরা পড়ে তার নিরিখে গ্রেপ্তারের সংখ্যা কম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। অভিযান আরো বেগবান হবে। অভিযান চলুক, তবে তা যথাযথভাবে হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন রয়েছে। খুচরা বিক্রেতা ও মধ্য পর্যায়ের সরবরাহকারীদের গুরুদণ্ড দিয়ে গডফাদারদের শাস্তির বাইরে থেকে যেতে দেওয়া সুষ্ঠু অভিযানের সাক্ষ্য বহন করে না। যদি জানাই থাকে কারা ইয়াবা ব্যবসার হোতা বা নিয়ন্ত্রক, তাহলে তাদের ধরার ও শাস্তি দেওয়ার কার্যকর উপায়ও বের করতে হবে।
গডফাদারদের সঙ্গে রাজনৈতিক মহল থেকে বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কোনো আপসরফা হয়েছে কি? যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার একটা উপায় অবশ্যই বের করতে হবে। তারা মাদক ব্যবসা থেকে যে অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছে, তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। অভিযানের উদ্দেশ্যের স্পষ্টতাও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে থাকতে হবে। মাদক ব্যবসায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা বা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত।