কাজিরবাজার ডেস্ক :
আবার নতুন করে সংগঠিত হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-শিবির। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট যোগদানের পর থেকেই আনন্দ উল্লাসের জোয়ার বইছে সংগঠনটিতে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কারণে এতদিন অস্তিত্ব সঙ্কটের কবলে পতিত হওয়া এই সংগঠনটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটভুক্ত দল হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশের শক্তি জোগাবে। লন্ডনে অবস্থানকারী তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তড়িঘড়ি করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট থেকে ল্যাং মেরে বাদ দেয়া হয় ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারাকে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনে অবস্থানকারী জামায়াতের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। লন্ডনে গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারাকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। বিকল্প ধারার প্রধান ডাঃ বি চৌধুরী জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাদ দেয়ার শর্তারোপ করায় মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয় লন্ডনে অবস্থানকারী জামায়াতের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক ও লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির নেতা তারেক রহমান। কারণ জামায়াত-শিবির স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী দল হলেও তাদের ভোট ব্যাংককেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে লন্ডন গোপন বৈঠকে। এ ছাড়াও ঐক্যফ্রন্টের জোটভুক্ত দল বিএনপির খুবই বিশ্বস্ত জামায়াত-শিবির।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিকল্প ধারার প্রধান ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী ঐক্য প্রক্রিয়ার শর্ত হিসেবে জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাদ দিতে বলায় মারাত্মক ক্ষুব্ধ হওয়া জামায়াত-শিবির প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। জামায়াত-শিবিরের তৎপরতায়ই লন্ডনে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামায়াতের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এমনিতেই লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বিকল্প ধারার মাহি বি চৌধুরী ও তার পিতা ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীরও ওপর মারাত্মক ক্ষিপ্ত ছিলেন। তার ওপর জামায়াত-শিবিরকে বাদ দিতে বলায় লন্ডন গোপন বৈঠকে বসে ব্যারিস্টার রাজ্জাক ও তারেক রহমান তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। এরপরই ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারার ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য গোপনে তৎপরতা চালায় যুদ্ধাপরাধী পরিচিতি এই সংগঠনটি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে তারা বুঝাতে সক্ষম হয় যে তাদের ভোট ব্যাংক পেতে হলে ডাঃ বি চৌধুরীর বিকল্প ধারাকে বাদ দিয়েই ঐক্যফ্রন্ট করতে হবে। এতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট মরিয়া হয়ে মাঠে নেমে তৎপরতা চালিয়ে তাদের পক্ষে টানতে সক্ষম হয় গণফোরাম প্রধান ড. কামাল হোসেনকে। এরপর ডাঃ বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে সেখান থেকে জেএসডির রব, নাগরিক ঐক্যের মান্নাকে নিয়ে আসার কূটকৌশল চালানো হয়। কূটকৌশল সফল হলে বিকল্প ধারা একা ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। এটাও জামায়াত-শিবিরের গোপন তৎপরতার সফলতা বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনে গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের যেখানেই সভা-সমাবেশ হবে সেখানেই বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের হয়ে সভা-সমাবেশে শক্তি জোগাবে জামায়াত-শিবির। এই সংগঠনটির আন্তর্জাতিক লবিংও খুবই শক্তিশালী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে ব্যাপক লবিং করানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরে আসতে না পারে। ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশে জামায়াত-শিবিরের নিজস্ব কোন সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন না থাকলেও তারাই যে জামায়াত-শিবির তাদের পরিধেয় টুপি-পাঞ্জাবী সংখ্যা দিয়েই বুঝানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট গঠনে মহানগর নাট্যমঞ্চে যেদিন প্রথম সভা হয় সেদিন টুপি-পাঞ্জাবী পড়া মানুষজন দিয়েই জামায়াত-শিবির ও তাদের জোটভুক্ত দলের মানুষজনকে বুঝানো হয়েছে এমনটা মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।