একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে দুই জেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

98

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
কিতার লাগি আইছো বক্তব্য নিতায় স্বাধীনতার পর থাকি কত লেখালেখি অইলো হাতিমারা নদীর উপর সেতু তো আর অইলো না টিভি পত্রিকায় বক্তব্য দিয়ে লাভ নাই। গতকাল হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মীরা হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার মিলনস্থল আউশকান্দি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ও খলিলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এরা বরাক(হাতিমারা) নদীর উপর সাঁকো দিয়ে স্থানীয় মানুষের চলাচলের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় আলতাফ উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ভোটের সময় প্রার্থী অকলতের মুখে কী সুর, এটা করবো সেটা করবো কষ্ট থাকতোনায়, কিন্তু ইলেকশন শেষ তাদের কথাও শেষ, তিনি আরও বলেন, মেঘের দিনে বাঁশের মধ্যে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আমার মতো কত বুড়ো লোক আঘাত পায়, কত ছাত্রছাত্রী পড়ে গিয়ে বই-খাতা ভিজে যায়।
নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পাশেই মৌলভীবাজার জেলার খলিলপুর ইউনিয়ন। দুই জেলার সীমান্ত জুড়ে এরা বরাক (হাতিমারা) নদী। এরা বরাক নদীর এপারে হবিগঞ্জ ওপারে মৌলভীবাজার। এই নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সীমান্ত এলাকার প্রায় ৩৫টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একটি সেতুর অভাবে ওই এলাকার লোকজন চিকিৎসা, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ আধুনিকতার নানা ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ওই এলাকার মানুষ একটি বাঁশের সাঁকো ওপর নির্ভর করে চলাচল করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয় ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। এ সাঁকো পাড় হতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশু- কিশোর ও বৃদ্ধাদের। প্রতিবছর এরা বরাক নদীর ওপর দীর্ঘ ৩০০ মিটার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করতে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে সাঁকো নির্মাণের ব্যয়ভার বহন করেন। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও সেতুটি পায়নি নদী-তীরবর্তী মৌলভীবাজার অংশের কেশবচর, সাবটিয়া, দেওয়াননগর, হলিমপুর, ঘোড়ারাই, কাটারাই, কাঞ্চনপুর, চানপুর, নামুয়া, খলিলপুর ও সাদুহাটি এবং হবিগঞ্জ অংশের ফরিদপুর, নোয়াহাটি, সিটফরিদপুর, ধর্মনগর, আলমপুর, নাজিমপুর, ফরাসতপুর, বখশিপুর, মুকিমপুর, সিছনপুরসহ উভয় জেলার ৩৫ গ্রামের মানুষ। এ কারণে অর্থনৈতিক, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে উভয় জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
দেড় বছর পূর্বে মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন ও হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরীকে অতিথি করে উভয় জেলার বাসিন্দাদের উদ্যোগে সভা করা হয়েছিল। তারা উভয়েই সেতুটি নির্মাণ করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করলেও কোনো আগ্রগতি আসেনি। নবীগঞ্জ উপজেলার আইশকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ব্যাংক- বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরা বরাক নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে। খলিলপুর ইউনিয়ন মৌলভীবাজার শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে থাকায় নবীগঞ্জ অংশের ওইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বল্পসময়ে যোগাযোগ সুবিধাজনক। তবে নদীটির ওপর সেতু না থাকায় মুমূর্ষু রোগী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নদীর ওপারের নবীগঞ্জ অংশের হাসপাতালগুলোতে যেতে পারেন না তারা। এ কারণে বাধ্য হয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে ৩৫ কিলোমিটার দূরের মৌলভীবাজার শহরে অথবা ২৫ কিলোমিটার দূরের সরকারবাজার হয়ে শেরপুরে যেতে হয়। এর আগে অনেক রোগীই রাস্তায় মারা গেছেন। অথচ ওই সেতু হলে হাসপাতাল যেতে এলাকাবাসীর সময় লাগবে ৮ থেকে ১০ মিনিট।