রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক

32

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার সকালে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক প্রভাব শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে যোগদান করেন। সেখানে তিনি বছরাধিককাল ধরে চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা-সঙ্কট সমাধানে তিন দফা প্রস্তাব বা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। প্রথমত, মিয়ানমারকে অবশ্যই বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বিলোপ এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে সে দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত করার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দেয়ার সঠিক উপায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের প্রতি নৈরাজ্য রোধে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের জবাবদিহি, বিচার বিশেষ করে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের সুপারিশের আলোকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আর তাহলেই কেবল সব রোহিঙ্গার নিরাপদে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত হবে মিয়ানমারে।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের বিষয়টি উঠে এসেছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেদেশে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ ও বিতাড়নে সেনাবাহিনীর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও দায়-দায়িত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। গণহত্যায় সেনাপ্রধানসহ অন্তত ছয়জন জেনারেলকে বিচারের আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অথবা সমমানের কোন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। এর পাশাপাশি সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর তথা সরকারপ্রধান আউং সান সুচিকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেনাপ্রধানসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ফেসবুকে। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান অবশ্য সপ্তাহখানেক পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই।
ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান, আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের মিয়ানমারে প্রবেশ ও কাজ করার সুযোগ সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ইতোমধ্যে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সামরিক অভিযান তথা হত্যা-খুন-ধর্ষণসহ পোড়ামাটি নীতি অবিলম্বে বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ দমন-পীড়নের অভিযোগ এবং তাতে সমর্থন দেয়ার সুনির্দিষ্ট কারণে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলপ্রাপ্ত আউং সান সুচির বিরুদ্ধেও নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছে। অতঃপর যত দ্রুত তা বাস্তবায়িত হয় এবং রোহিঙ্গারা সেদেশে পুনর্বাসিত হয় ততই মঙ্গল। আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়েরের জন্য ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণেও সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য। অতঃপর যত তাড়াতাড়ি রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে নেয় মিয়ানমার সরকার ততই ভাল হবে দেশটির জন্য।