রাজনীতিতে মেরুকরণ

44

গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হতে চলেছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় সফর শুরু হয়েছে। ট্রেন সফরের পর ঢাকা-কক্সবাজার সফর হয়েছে সড়কপথে। মহাজোট সরকারের সঙ্গে থাকা দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসছে। অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। গত শনিবার এক সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা আসে। সে সমাবেশে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানিয়েছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে ছিল ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও। ১ অক্টোবর থেকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া সারা দেশে সভা-সমাবেশ করবে। অন্যদিকে ১৪ দলের শরিক দলগুলো সারা দেশে সভা-সমাবেশসহ নানা প্রচারণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরিতে মাঠে নেমে পড়েছে। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা আলোচনা হবে। এরই মধ্যে ১৪ দলের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নিজেদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হতে শুরু করবে। সে উত্তাপ ছড়িয়ে যাবে সবখানে। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে আসায় বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারায় সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল ও সরকার বা সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় মতপার্থক্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান মেনে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চায়। অন্যদিকে বিএনপিসহ সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো চায় সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় সংবিধানের কথা বলা হলেও সে যুক্তি মানতে নারাজ অন্য পক্ষ। এটাই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয়। এর আগে যুক্তফ্রন্ট নেতা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় গিয়ে বিএনপি নেতারা আলোচনা করেছেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, বিএনপি অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছে।
রাজনীতিতে মেরুকরণ নতুন কিছু নয়, তবে সব দলকেই পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রাজনীতি করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবার আছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন কোনোভাবেই নাগরিক অধিকার হরণের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।