রোগী মারার ডাক্তার চাই না – প্রধানমন্ত্রী

88

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রোগী মারার ডাক্তার হোক এটা চান না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দায়িত্ব দিতে চান তিনি। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে ঢাকা মেডিকেল থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকাল ১০টার কিছু পর হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
কোরিয়ার আর্থিক সহায়তায় এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালটি নির্মিত হবে এবং এতে বছরে তিনশ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এই সহযোগিতার জন্য তিনি কোরিয়া সরকারকে ধন্যবাদও জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষার মান নিয়ে কথা বলেন। গুরুত্ব দেন গবেষণার ওপর। চিকিৎসা পেশায় সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন, দেশের গরিব মানুষ যেন চিকিৎসা পায়, সেটি নিশ্চিত করার তাগাদা দেন।
মেডিকেল কলেজগুলোতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাইভেট অনেক মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, সেখানে আদৌ পড়াশোনা হচ্ছে কি না, সত্যিকারের ডাক্তার হচ্ছে, না রোগী মারা ডাক্তার হচ্ছে সেটা আমাদের দেখা দরকার।’ ‘একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ই পারবে সেটা নজরদারিতে রাখতে। যাতে একটা মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সে ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। চিকিৎসা সেবাটা মানপূর্ণ করতে চাই।’
নীতিমালা অনুসরণ না করে দেশে অনেক মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অভিযোগ এসেছিল নানা সময়। এসব মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়ে সরকারকে চিঠিও দিয়েছিল চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বিএমএ।
মানহীন এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা ভবিষ্যতে সংকট আরও গভীর হবে বলে সংগঠনটি জানিয়েছিল। পরে সরকার মানহীন কিছু মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্চ আদালত গিয়ে ভর্তির অনুমোদন নিয়ে আসেন।
মেডিকেল কলেজে কী পড়ানো হয়, সেটি তদারকির দায়িত্ব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকলেই এই মান নিশ্চিত করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমএইউ) গড়ে তোলা, বর্তমান আমলে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে সব বিভাগীয় শহরেই হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিভাগের সব জেলায় স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তদারকি করলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ আগের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের অধিভুক্ত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা সেবা বিস্তারে তার সরকারের আমলে নেয়া নানা উদ্যোগ বর্ণনা করে বলেন, সেবার বিস্তারের পাশাপাশি মানের দিকেও নজর দিতে চান তিনি। তার স্বপ্ন, বাংলাদেশেও মিলবে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা।
ধনীদের বিদেশে চিকিৎসায় খুশি প্রধানমন্ত্রী
সম্পদশালীদের দেশের বদলে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, এতে তার আপত্তি নেই। বরং তিনি খুশিই হোন।
এই মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেক ধনী শ্রেণি গড়ে উঠেছে, তাদের একটু অসুখ হলে হাঁচি কাশি হলে বিদেশ যেতে চায়। আমি তাতে কিছু মনে করি না।’
‘যারা অনেক অর্থশালী, সম্পদশালী, তারা যদি বিদেশে যায় আমার আপত্তি নাই এ কারণে যে আমার এখানকার সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত যারা তারা একটু জায়গা পাবে, চিকিৎসা করার সুযোগ পাবে। সে জন্য এই সুযোগটা তাদের জন্যই থাক।’
‘আর বড়লোক যারা আছেন, অনেক পয়সার মালিক, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা বিদেশে যাক।তাতে আমার জায়গাটা খালি হলো, আমার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পেল।সেদিক দিয়ে আমার খুব একটা বেশি আপত্তি নাই।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনককান্তি বড়ুয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি।