শোকাহত আগষ্ট

189

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেখতে দেখতে ৪৩টি বছর পেরিয়ে গেছে। রাত পোহালেই কাল সেই ভয়াল কালরাত, ১৫ আগষ্ট। জাতির সব হারানোর দিন। একজন প্রকৃত নেতার যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তার সব গুণ নিয়েই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ। যাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুবর্ণিল, যাঁর কণ্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস। এত কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে ঘাতকের হাতে।
৪৩ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই কালিমাময় দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজন। রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়।
কিন্তু তাতে তো এমন একজন রাষ্ট্রনায়ককে একটি জাতির হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি ফিরে আসেন প্রতিটি উৎসবে, আনন্দ-বেদনায়। তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়ী। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। বিদেশে থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
দিনটি তাই বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত। কাল সেই শোকের দিন, কান্নার দিন। জাতীয় শোক দিবসে আগামীকাল বাঙালি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় যথাযোগ্য মর্যাদায় কাল পালিত হবে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী।
আগষ্ট মানেই শোক, আগষ্ট মানেই শোকে আপ্লুত বাঙালির কান্নাভেজা পরম বেদনায়। আগষ্ট এলেই শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে বাঙালির মাথা। ডুকরে কেঁদে উঠে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির হৃদয়। চারদিকে কেবলই স্রোত নামে শোকস্তব্ধ মানুষের। মানুষ কাঁদে। বেদনায় গান গায়। নামে শোকের মিছিল। কালোয় কালোয়, শোকে শোকে বেদনাবিধূর হয়ে ওঠে গোটা দেশ, দেশের মানুষ।
পিতাহীন দেশে, সঙ্কটে উপনীত বাঙালি তাই এখনও আশ্রয় খোঁজে তাঁরই আদর্শে, রেখে যাওয়া কন্যা শেখ হাসিনার পরম ছায়ায়, ভালোবাসায়। মুক্তি মেলে মানুষের, তাঁরই স্বপ্নাকাশে। মানুষ যূথবদ্ধ হয়। সম্মিলিত শোক রূপ নেয় শক্তিতে। নতুন করে বেঁচে থাকার নতুন শপথ নেয় বাঙালি। কেননা জীবনের সুখ, স্বস্তি, আরাম, মোহ, অর্থকড়ি সবকিছু ত্যাগ করার এক মহান মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে কীভাবে একজন মানুষ অবলীলায় বিসর্জন দিতে পারেন নিজের সব চাওয়া-পাওয়া, তার কালজয়ী ইতিহাস রেখে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসের প্রথম বাঙালি যাঁর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য, বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অবয়বে। সাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আগে অনেকেই দেখেছেন কিন্তু বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু এ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলেই তিনি বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জনক। তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন ভূখন্ড এবং লাল-সবুজের পতাকা অর্জন করেছি। আজও তাঁরই প্রেরণায় আমরা এগিয়ে চলেছি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
শোকের মাস আগষ্টের চৌদ্দতম দিন ছিল মঙ্গলবার। পহেলা আগষ্ট থেকে প্রতিদিনই অজস্র সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃতজ্ঞ চিত্তে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল ও অজস্র সংগঠন জাতীয় শোক দিবস পালনে গ্রহণ করেছে বিস্তারিত কর্মসূচী। আওয়ামী লীগ এবার বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পালন করছে মাসব্যাপী কর্মসূচী।