কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ চূড়ান্ত

73

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা প্রায় তুলে দিয়ে মেধাকে প্রাধান্য দেয়ার পক্ষে মত দিতে যাচ্ছে এ বিষয়ে গঠন করা উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কমিটি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম এ ক্ষেত্রে অলমোস্ট শব্দটি ব্যবহার করেছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের একটি আদেশের কারণে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের কাছে মন্তব্য জানতে চাইবেন তারা। আর আদালত যদি সায় দেয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধা কোটাও থাকবে না।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সুপারিশ দিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পারার পর তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন এবং তারা বিভিন্ন দেশে কোটার বিষয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে বলেন, ‘কোটা নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আমরা মেরিটকে (মেধা) প্রাধান্য দিয়ে অলমোস্ট (প্রায়) কোটা উঠিয়ে দেয়ার সুপারিশ করব।’
সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই কোটার সুবিধা সন্তানদেরকেও দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা নাতি-নাতনিদেরকেও দেয়া হয়।
আর সে সময় থেকেই প্রধানত জামায়াতপন্থীরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়।
তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত ফেব্র“য়রিতে শুরু হয়। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছে।
গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন কোনো কোটা থাকবে না।
তবে গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। এখন এটি বাতিল হলে তিনি আদালত অবমাননায় পড়বেন।
তাহলে কমিটি যে কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে, তা কীভাবে সম্ভব?- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের কমিটি মোটামুটি সুপারিশ ঠিক করেছে। আর তা হচ্ছে কোটা অলমোস্ট উঠিয়ে দেওয়া। সরাসরি মেধায় চলে যাওয়া। তবে সুপ্রিম কোর্টের একটি অবজারভেশন আছে সেটা হলো, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে হবে অথবা খালি থাকলে তা পূরণ করতে হবে। এটার উপর সরকার কোর্টের মতামত চাইবে। তবে এটাকেও যদি রহিত করে দেয়, তাহলে কোটা একেবারেই থাকবে না।’
‘আর কোর্ট যদি ভারডিক্ট (রায়) দেয় যে, ওই অংশটুকু (মুক্তিযোদ্ধা কোটা) রাখতে হবে তাহলে ওই অংশটুকু রেখে বাকি সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়া হবে। এটা আমাদের প্রাথমিকভাবে কমিটির সিদ্ধান্ত।’
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে যেটা সুপারিশ রেডি করেছি তা হলো কোর্টের সাথে সামঞ্জস্য রেখে।’
২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে নিষ্পত্তি করে দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি মামনুন রহমান এবং বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বঞ্চের এই রায়ে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ (কোটা) অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।’
রায়ে আরও বলা হয়, ‘কোনো ক্ষেত্রে কোটা পূরণ যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে পদ খালি রাখতে হবে।’
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায়ের পর্যবেক্ষণের কিছু অংশ বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দেয়। আপিলের রায়েও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের (কোটা) বিষয়টি বহাল রাখা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে আদালতের এই বক্তব্য আদেশ নাকি পর্যবেক্ষণ- এমন প্রশ্নে জবাবে সচিব বলেন, ‘এটা আমরা পরিস্কার নই। আমরা নিজেরাও কোর্টের এই নির্দেশনা পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। তাই আমরা কোর্টের কাছে যাব। কারণ কোর্টের যে নির্দেশনাগুলো আছে তা মানা আমাদের জন্য বাধ্যবাধকতা আছে।’
কোটা উঠে গেলে পশ্চাদপদ জেলার বাসিন্দারা কীভাবে সুবিধা পাবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছি ওনারা (পিছিয়ে পড়া জেলার চাকরি প্রার্থী) অগ্রসর হয়ে গেছে।’