কাজিরবাজার ডেস্ক :
গভীর হয়েই বসেছে শোক। ৪৩ বছর পর আজও মুহুর্মুহু কাঁদাচ্ছে মানুষকে। যে বাঙালির জন্য এত ত্যাগ, এত তিতিক্ষা, বারবার ফিরে আসা মৃত্যুর দুয়ার থেকে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতাকে গুটিকয় লোভাতুর নরপিশাচ এমন নির্মমভাবে হত্যা করবে- এমন ভাবনা অবিশ্বাস্য ছিল বাঙালির কাছেও। আর তাই বারবার মনে করে মুখ, উজ্জ্বল চোখের দ্যূতি, আজও শ্রদ্ধায়, নৈবেদ্যে, প্রতিদিন-প্রতিক্ষণে ফিরে আসেন পিতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুকে যেদিন হত্যা করল নরপিশাচ ঘাতকরা, ঝলমলে আগস্টের উজ্জ্বল আকাশে, সেদিন ডানা মেলল মন খারাপের মেঘ। ছেঁড়া মেঘ কান্না হয়ে ঝরল মানুষের চোখ বেয়ে। আগষ্ট এলেই সে মেঘ এখনও উড়ে এসে বসে বাঙালির ঘরে ঘরে। পোড়ে অনুশোচনা ও অনুতাপের আগুনে।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের যে বাড়িটি একদিন স্বাধীনতার প্রশ্নে একই পথে নিয়ে এসেছিল বাঙালিকে, সেই বাড়িটিই সেই বাঙালিকে কাঁদাল একদিন অঝোর ধারায়। বাড়িটির ব্যালকুনিতে দাঁড়ানো দৃঢ়চেতা যে নেতার অঙ্গুলি হেলনে বুকের ভেতর জ্বলতো মুক্তির দ্রোহ, ঘাতক নরপিশাচদের কারণে সেই পিতাই একদিন মুখথুবড়ে পড়লেন বাঙালির অনিবার্য সেই বাড়ির মেঝেতেই। সিঁড়ি গড়িয়ে বইল রক্তের ধারা। ঘাতকের বুলেটবিদ্ধ করল কালজয়ী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে। বিদ্ধ হলো গোটা বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশ। রচিত হলো পৃথিবীর এ যাবতকালের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম ইতিহাস।
শোকাহত ও অভিশপ্ত মাস আগষ্টের আজ দশম দিন। রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, ওভারব্রিজ, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের সামনে উড়ছে বিশাল বিশাল কালো পতাকা ও ব্যানার। প্রতিটি ব্যানার-ফেস্টুনেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন শ্লোগান। পলাতক খুনীদের দেশে ফেরত এনে ফাঁসির রায় কার্যকর এবং নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে অজস্র সংগঠনের পোস্টারে ছেয়ে গেছে সর্বত্র, প্রতিটি অলি গলির দেয়াল।
আগষ্ট এলেই মোচড় দিয়ে ওঠে বাঙালীর বুকের ভেতরটা। স্মৃতির উঠোনে গল্প বুনে বেদনার। সেই অমোঘ নেতার স্মরণে-শ্রদ্ধায়, কান্না-ভালবাসায় বারবার অবনত হয় মাথা। কতিপয় বর্বর স্বাধীনতাবিরোধী সেনা কর্মকর্তা বর্বরোচিত অভিলাস পূরণে গড়ল ঘৃণ্য ইতিহাস- তার মর্মবেদনা বাঙালীকে বয়ে বেড়াতে হবে অনন্তকাল। ঘৃণ্য সে কালিমায় লিপ্ত হলো সহজ-সরল বাঙালির মুখ।
এভাবেই আগষ্টের প্রতিটি দিন শোকাবহ পরিবেশে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি স্মরণ করছেন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে প্রতিটি শোকের অনুষ্ঠানে।