কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারছি এবং আমাদের সন্তানরা মহাকাশ বিজ্ঞান, পরমাণু প্রযুক্তি, সমুদ্র বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্র, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে- যা দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন।’ শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে দু’টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে গাজীপুর ও বেতবুনিয়াতে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের (স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন) উদ্বোধন করেছেন। গ্রাউন্ড স্টেশন দু’টির নামকরণ করা হয়েছে সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র গাজীপুর এবং সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র বেতবুনিয়া।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ১৪ জুন এই বেতবুনিয়াতে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন এবং সেখান থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু হয় ও তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা এখন মহাকাশ জয় করেছি।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের বেতবুনিয়াতে এই উপগ্রহ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি দিয়ে গেছেন। আর সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর পরামর্শ এবং উদ্যোগে আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই সেই মুজিব থেকে সজীব- সেখানেই আমরা পৌঁছেছি।’
গত ১২ মে বাংলাদেশ সময় ভোর ২টা ১৪ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট এবং পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে পরমাণু ক্লাবের ৩৪তম সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তার কার্যক্রম শুরু করেছে। এই দু’টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহীতাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হলো।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর গাজীপুরের তেলীপাড়ার ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রাইমারী গ্রাউন্ড স্টেশন এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র ব্যাকআপ গ্রাউন্ড স্টেশন হিসেবে যুগপৎ ব্যবহৃত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে দোয়া চাই। দোয়া করবেন যাতে দেশ ও জাতির সেবার আমরা সবসময় নিয়োজিত থাকতে পারি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের সেবায় কাজ করে। জনগণের সেবায় কাজ করে যাবে। জনগণের কল্যাণই আমাদের একমাত্র চিন্তা।’ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যম সুন্দর সিকদার বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন দু’টির নাম সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। পরে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অন্যতম রূপকার বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাউন্ড স্টেশন দু’টির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার সক্ষমতা। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার প্রায় ৩৬ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গের সমপরিমাণ। অর্থাৎ ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থেকে পাওয়া যাবে প্রায় এক হাজার ৪৪০ মেগাহার্টজ পরিমাণ বেতার তরঙ্গ। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। আর ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে ভাড়া দেয়ার জন্য রাখা হবে।
৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি হচ্ছে কেইউ ব্যান্ডের এবং ১৪টি সি ব্যান্ডের। গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় স্থাপিত দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। উৎক্ষেপণের পর নির্দিষ্ট দূরত্বে দ্রাঘিমাংশে (প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে) স্যাটেলাইটটি অবস্থান করছে। ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-ইতালি থেকে স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণভাবে কন্ট্রোল করা হলেও বর্তমানে গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ট্র্যাকিং এবং কন্ট্রোলিং করা হচ্ছে।
প্রকৌশলীরা এখান থেকে স্যাটেলাইটে সিগন্যাল পাঠিয়ে আবার তা রিসিভ করছে। প্রয়োজন হলে সিগন্যাল পাঠিয়ে স্যাটেলাইটটিকে (১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পজিশনে) নির্দিষ্ট অবস্থানে ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা করছে। নিয়মিত ট্র্যাকিং ও কন্ট্রোলিং করা হচ্ছে।