কাজিরবাজার ডেস্ক :
আইন প্রণয়ন কাজে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংবিধানে বিশেষ কোটা চালু হয়েছিলো ১৯৭২ সালেই। সেই থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ থাকছে। এই সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা প্রতিটি সংসদেই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। এখান থেকে অনেকে মন্ত্রীও হয়েছেন।
তাছাড়া সংসদ অধিবেশনে আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন কাজে নারী এমপিরা সরব ভূমিকা পালন করছেন। অধিবেশনে তাদের উপস্থিতি প্রাণবন্ত করে সংসদকে। এমনকি অনেক সময় নারী এমপিদের উপস্থিতির কারণেই কোরাম পূর্ণ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সব অধিবেশনেই নারী এমপিদের বিশেষ ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে।
সংবিধানের বাধ্যবাধকতায় আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন থাকবে, কি থাকবে না এই নিয়ে যখন সংশয় দেখা দিলো; তখন সেই সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় সংসদ। রবিবার (৮ জুলাই) ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮’ পাস করার প্রস্তাব উত্থাপন করতে যাচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
দিনের কার্যসূচিতে আইন প্রণয়ন কার্যাবলিতে বিলটি উত্থাপনের তালিকায় রয়েছে। কার্যাবলিতে বলা হয়েছে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক প্রস্তাব করবেন যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের অধিকতর সংশোধনকল্পে আনিত বিলটি (সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল,২০১৮/ ঞযব ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ (ঝবাবহঃববহঃয অসবহফসবহঃ ) ২০১৮ পাস করা হউক।
এদিকে গত ৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এই বিল পাসের সময় সব সংসদ সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনেও থাকছে সংরক্ষিত আসন।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের বিধানে সংশোধনী এনে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়। উত্থাপিত সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮, আরও ২৫ বছর সংরক্ষিত আসন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় সংশোধনী এনে বলা হয়েছে- ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন ২০১৮ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পঁচিশ বছর অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তীতে সংসদ ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন শুধুমাত্র নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা আইনানুযায়ী আগের সদস্যদের মধ্যমে সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে- স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইন প্রণয়নে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তদানীন্তন গণপরিষদ প্রণীত ১৯৭২ এর মূল সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ এর দফা (৩) এর বিধানে জাতীয় সংসদে নারী সদস্যদের জন্য সংবিধান প্রবর্তন থেকে ১০ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে সংসদ ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ১৫টি আসন সংরক্ষণ করা হয়।
সংরক্ষিত নারী আসনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণে সমাজে সবক্ষেত্রে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। সবশেষ সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ এর দফা (৩) এর বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের ১০ (দশ) বছর মেয়াদ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ শেষ হবে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে ওই সময় অতিবাহিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য কোন আসন সংরক্ষিত থাকবে না। সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদেরকে নিয়ে গঠন করতে হলে দশম সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংবিধানে এ সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা আবশ্যক।