কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই বিগত ৯ বছরে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ অর্জন বাংলার জনগণ। এই সাফল্যের ধারাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের দীর্ঘ ৬ বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ জয় সম্ভব হয়েছে। মহাকাশে আজ বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ গৌরব আমাদের সরকারের, এ গৌরব দেশের ১৬ কোটি মানুষের। স্যাটেলাইট টেকনোলজি ও সেবা প্রসারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। স্পেস টেকনোলজির জ্ঞান সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহানের পৃথক দুটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট যোগাযোগের সূচনা করেন।
তিনি বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে মহাশূণ্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। স্বপ্নের স্যাটেলাইট নির্মাণ ও এর সফল উৎক্ষেপণে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত। তিনি বলেন, ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ সকল প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এ জটিল নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছে ২ বছর।
সংসদ নেতা আরও জানান, এ স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য বিটিআরসি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প এবং বিএসসিএলের ৩০ জন কর্মকর্তা ফ্রান্সের কান এবয় তুলুসে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে এ সকল কর্মকর্তা প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশন, গাজীপুর এবং সেকেন্ডারি গ্রাউন্ড স্টেশন, বেতবুনিয়ায় কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, স্যাটেলাইট পরিকল্পনা, অবকাঠামো নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণ একটি দীর্ঘ কর্মপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোয়, যা যথেষ্ট জটিল হলেও এর বহুবিধ ব্যবহার এবং সুবিধা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশণ, ডিটিএইচ, ভিস্যাট প্রভৃতি সেবা প্রদান, সমগ্র বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার নিশ্চিত হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখা যাবে।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি ট্রান্সপন্ডার লীজ দেয়া যাবে। ট্রান্সপন্ডার লীজ দিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বর্তমানে প্রদেয় বার্ষিক প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর কাভারেজভূক্ত এলাকা হলো বাংলাদেশসহ সকল সার্কভূক্ত দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখিস্থান এবং উজবেকিস্থান।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের দক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব আহরণে ঊর্ধ্বগতি এবং ঋণ গ্রহণে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রবৃদ্ধির সুফল সুষমভাবে বন্টিত হওয়ায় একদিকে যেমন মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অন্যদিকে দারিদ্র্য ও অসমতা কমেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। প্রতিবেশি ও সমমানের রাষ্ট্রসমূহের তুলনায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভূতপূর্ব সাফল্যে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দেশ আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি। দেশে অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে আধা ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। তিনি জানান, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গড়ে বার্ষিক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০২০ সাল নাগাদ ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। আশা আশা করি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাঁচ বছর মেয়াদে প্রবাসে ২০ লাখসহ ১ কোটি ২৯ লাখ অতিরিক্ত কর্মসংস্থান হবে। এ সময়ে ৯৯ লাখ শ্রমিক কর্মশক্তিতে যোগদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে আরও বলেন, রফতানি কেন্দ্রিক উৎপাদনে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করতে হবে। অপ্রচলিত পণ্য রফতানির মাধ্যমে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশে রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের বিপুল জনসংখ্যাকে বোঝার বদলে সম্পদে পরিণত করতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই বিগত ৯ বছরে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ অর্জন বাংলার জনগণ। এই সাফল্যের ধারাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ।
সরকারি দলের এম এ মালেকের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলার জন্য বিনিয়োগ সংক্রান্ত সুবিধাদি সৃষ্টি করা হচ্ছে, গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকৃত বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ২০০৯ হতে ২০১৭ পর্যন্ত কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ওয়ান স্টপ সার্ভিস সম্পূর্ণরূপে চালু হলে বর্তমানে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অবদান প্রায় ২৩ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এদেশে বিশ্বমানের বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির যে কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করি।