মহিমান্বিত রজনী আজ

44

পবিত্র রমজান মাস বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিশেষ রহমত ও বরকতের মাস। রমজান মাসের এক বিশেষ রাত লাইলাতুল ক্বদর বা শব-ই-ক্বদর, মহিমান্বিত রজনী। পবিত্র শব-ই-কদরে কোরান শরীফ নাজিল হয়েছিল। বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে এমনটি বিশ্বাস করা হয় যে, রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে মহিমান্বিত এই রাত অর্থাৎ শব-ই-ক্বদর নিহিত রয়েছে। আর সে কারণেই ধর্মপ্রাণ মানুষ রোজার মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হন। তবে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, ২৬ রমজান রাত অর্থাৎ ২৭ রমজানের রাতটিই সেই পুণ্য রজনী, যে রাতের সংবাদ মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) দিয়েছেন। মুমিন মুসলমানদের জন্য এ রাতটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতে যিনি নিজেকে যত বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত রাখবেন তিনি তত বেশি সওয়াব হাসিল করবেন। ফজিলতের দিক থেকে এ রাতকে হাজার রাতের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। লাইলাতুল ক্বদরের মহিমা ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিশ্বের সকল মুসলমানই অবহিত। অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে জ্ঞান ও শিক্ষাচর্চার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই রাতে মানব সম্প্রদায়কে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) জন্মেছিলেন আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগে। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর কাছে এই বলে কোরান নাজিল করেছিলেন, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।’ ‘পড়ো’ কথাটির ভেতর দিয়েই শুরু হয়েছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে সভ্যতার নতুন জয়যাত্রা। জাহেলিয়াত বা অন্ধকার থেকে আলোর যুগে উত্তরণ, জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে আত্মোপলব্ধি, কুসংস্কার ও গোঁড়ামি থেকে মানুষের মুক্তি এটাই তো ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী। সেদিক থেকে দেখলে বলতে হবে পবিত্র শব-ই-ক্বদরের রাতটি শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্যই তাৎপর্যমণ্ডিত এবং একই সঙ্গে এটাও বলতে হয় যে, রাসূলে করিম হযরত মুহম্মদকে (সা.) মহান আল্লাহ তা’য়ালা সমগ্র মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। আর সে কারণেই তিনি রহমাতুল্লিল আলামিন। গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য তিনি রহমতস্বরূপ। রহমত ও বরকতময় পবিত্র শব-ই-ক্বদরের এই রাতটি মুসলমানদের জন্য বাড়তি পাওয়া। মহিমান্বিত এই রাতে বরাবরের মতো বিশ্বের মুসলমানগণ মহান আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদতে নিমগ্ন হবেন। মহিমান্বিত এই রাতে আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষ মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞা করতে পারলেই সার্থক হবে এই রাতের ইবাদত। মহান আল্লাহ তা’য়ালা সবাইকে ইসলামের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করার তওফিক দান করুন।