এসএসসিতে শূন্য পাস করা ১২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অ্যাকশন ॥ এমপিও-অনুমোদন ও স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

73

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার মান মূূল্যায়নের সূচক ছিল নিম্নমুখী। কুমিল্লা বোর্ড ছাড়া সব শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার কমেছে। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারেনি। গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফল আশানুরূপ হয়নি। এ ছাড়া শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান কমেছে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এবারের এসএসসিতে শূন্য পাস করা ১২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করে সরকারি অনুদান (এমপিও) ও অনুমোদন-স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
৬ মে প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। দেশের ২৮ হাজার ৫৫৮টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ১২২টি প্রতিষ্ঠানের একজনও পাস করতে পারেনি। ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১৬টি স্কুল ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় ৯৬টি মাদরাসা রয়েছে। ফল প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রী সব বোর্ড চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠকও করেছেন। ওই বৈঠকে শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।
জানা গেছে, শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড। ইতিমধ্যে মাদরাসা বোর্ডের শতভাগ ফেল করা মাদরাসাগুলোর কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। সাধারণ আট শিক্ষাবোর্ডে শতভাগ ফেল করা ১৬ স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক স্কুলের কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে।
শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শতভাগ অকৃতকার্য তালিকায় ঢাকা বোর্ডের অধীনে তিনটি স্কুল হচ্ছে— গাজীপুর কাপাসিয়ার কিরাটি পূর্বপাড়া ড. এ রহমান গার্লস হাই স্কুল, ফরিদপুর মধুখালীর গয়েশপুর বকশিপুর হাই স্কুল এবং জামালপুর সরিষাবাড়ির গুইঞ্চা আওনা এস ই এস ডি পি হাই স্কুল। এই তিন স্কুল থেকে এবারের এসএসসিতে মাত্র ২৫ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। তবে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক. মু. জিয়াউল হক বলেন, শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যৌক্তিকতা কতটুকু এটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্টভাবে কারণ ব্যাখ্যা দিতে শোকজ নোটিশ পাঠানো হবে। উপর্যুক্ত জবাব না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল করা হবে। একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের ৯৬ প্রতিষ্ঠানকে ১৩ মে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কাছে এর জবাব চাওয়া হয়েছে। শতভাগ ফেল করা মাদরাসার মধ্যে ১৯টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে গাজীপুর কাপাসিয়ায় বিলাসী মদিনাতুল উলুম বালিকা আলিম মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়ায় খামা বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইল ঘাটাইলে বখশিয়া দাখিল মাদরাসা, নবাবগঞ্জের উপজেলা সদরে সাজাহানপুর ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা, নওগাঁ পত্মীতলায় বড় বিদিরপুর দাখিল মাদরাসা, ছোট মাহারানদি টেকনিক্যাল দাখিল মাদরাসা, বগুড়ায় ধুনট উপজেলায় বেড়েবাড়ির সিনিয়র আলীম মাদরাসা, শিবগঞ্জে মেদিনীপারা মোজাদ্দিদিয়া দাখিল মাদরাসা, দিনাজপুর পার্বতীপুরে ঝিনাইকুরি ওসমানিয়া দাখিল মাদরাসা, যশোর কেশবপুরে প্রতাপপুর দাখিল মাদরাসা, সাতবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা, ইমান নগর এম বি জি দাখিল মাদরাসা, বরিশাল উড়িরপুরে মুন্সির তালুক বালিকা আলিম মাদরাসা, পিরোজপুর নেছারবাদে নেসারবাদ মুজাদ্দেদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, পটুয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, পুটয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, পটুয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চাতিলা সেফালিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা ও মাগুরার রিজিয়া রুবিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা। এমপিওবিহীন বাকি ৭৭টি মাদরাসার কোনোটি সরকারি অনুমোদিত ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ মাদরাসা অনুমোদন স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি নিয়মানুযায়ী প্রাপ্যতা না থাকলেও নানাভাবে তদবির করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তা এমওপিওভুক্ত করা হয়েছে। সৃষ্টপদ অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৬ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই বা একজন শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে কেউ পাস না করায় শতভাগ ফেলের সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর চাইতে শিক্ষকদের সংখ্যাই বেশি রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা। মাগুরার রিজিয়া রুবিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার ২০ ছাত্রী দাখিল পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমপিওভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটিতে ১৪ শিক্ষক ও তিন কর্মচারী রয়েছেন। নামসর্বস্ব এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা বেতন-ভাতা প্রদান করছে।
এ প্রসঙ্গে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, শতভাগ ফেল করা ৯৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে তাদের শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, শতভাগ শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে না। এ কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।