কমলগঞ্জে মণিপুরী লাই-হারাওবা উৎসব

116

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
প্রতি বছরের এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের উজাও- লাইরেম্বী লাইশং মন্দির প্রাঙ্গণে ১৭ মে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে মণিপুরী মৈতৈ জনগোষ্ঠীর অতি প্রাচীনতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান “লাই-হারাওবা উৎসব-২০১৮”। উদয়ন সংঘের আয়োজনে এ উৎসবে থাকবে মণিপুরীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান। দেশ বিদেশের জ্ঞাণীগুণী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। উৎসবটি ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী প্রতিদিন মাইবীর ঐশ্বরীক বাণীসহ লোকগান, লোকনৃত্য ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। কমিটির আহবায়ক হামোম তনুবাবু ও সম্পাদক এ হেমন্ত যুক্ত বিবৃতিতে উক্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
মণিপুরী “লাই-হারাওবা উৎসব” এটি মূলত একটি নৃত্য-উৎসব। এই নৃত্যকে মণিপুরী নৃত্যশৈলীর একটি সুপ্রাচীন নৃত্যধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মণিপুরী সমাজে প্রচলিত অন্যতম প্রাচীন লোকনৃত্যানুষ্ঠান ‘লাই হারাওবা জাগোই’ থেকেই এসেছে এই “লাই-হারাওবা উৎসব”।
এই নৃত্যে প্রকৃতি পূজার পরিচয় মেলে। লাই শব্দের অর্থ দেবতা, হারাওবা অর্থ আনন্দ এবং জাগোই অর্থ নৃত্য। এর ইতিহাস এরকম সৃষ্টিকর্তা যখন জড় ও জীব পৃথিবী সৃষ্টি করলেন এবং পরবর্তীকালে ¯্রষ্টার মূর্তির অনুকরণে মনুষ্য সৃষ্টিতে সফলতা পেলেন তখন দেবদেবীগণ আনন্দে যে নৃত্য প্রকাশ করেছিলেন তারই নাম দেয়া হয়েছে হারাওবা নৃত্য। তাই লাই হারাওবা নৃত্যে দেখা যায় পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে শুরু করে গৃহায়ন, শস্যবপন, জন্মমৃত্যু সবকিছুই নৃত্য ও সঙ্গীতের সুর লহরীতে ঝংকৃত হয়। এ নৃত্যের আঙ্গিক অংশগুলো যেমন লৈশেস জাগোই (সৃষ্টিনৃত্য), লৈতা জাগোই (গৃহায়ন নৃত্য) লৈসা জাগোই (কুমারী নৃত্য) প্রভৃতি মনিপুরী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোক সংস্কৃতি হিসেবে প্রদর্শিত হয়।
বর্তমানে লাইহারাউবা নৃত্য দুই ভাবধারায় পরিবেশিত হয়। এই ভাবধারা দুটি হলো মৈরাঙ লাইহারাউবা ও উমঙ লাইহারাউবা। এই দুটি ধারাতেই পরিবশিত হয় নানা ধরনের কাহিনী নির্ভর নৃত্যগীত। এই নাচে তান্ডব ও লাস্য উভয় ধারাই ব্যবহৃত হয়। এই নৃত্য শৈব নৃত্যধারার হলেও, এতে পরবর্তী সময়ে রাসনৃত্যের ভঙ্গীপারেঙ-এর প্রভাব পড়ে।