কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
গত বুধবার মধ্য রাতে কানাইঘাট সদর ইউ.পির ছোটদেশ আগফৌদ গ্রামের আব্দুল জলিলের বাড়ীতে ডাকাতি কালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সাবেক সৌদি প্রবাসী ইফজাল উদ্দিনের বাড়ীতে শোকের মাতম চলছে। নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী কিছুতেই এই অনাকাংখিত দুঃখজনক মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ইফজালের ফুফাতো ভাই একই গ্রামের সাবেক ইউ.পি সদস্য মৃত আফতাব উদ্দিনের পুত্র নাজিম উদ্দিন (২৩) কে গত বৃহস্পতিবার আটক করে ডাকাতির ও হত্যা মামলার আসামী দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার আদালতে সোর্পদ করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান ডাকাতদের গুলিতে নিহত ইফজাল এলাকায় একজন ভাল মানুষ ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত নাজিম উদ্দিন সব সময় তার সাথে চলাফেরা করত। গত বৃহস্পতিবার ময়না তদন্তের পর নিহতের লাশ সন্ধ্যায় বাড়ীতে নিয়ে আসা হলে স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বার বার মুর্ছা যান ইফজাল উদ্দিনের স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী নাছিমা বেগম। স্বামীকে হারিয়ে তিনি বাকরোদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এলাকার শত শত আবাল বৃদ্ধ বনিতা ইফজালের লাশ দেখতে নিহতের বাড়ীতে সে সময় ভিড় জমান। এ সময় অনেককে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার বাদ এশা নিহত ইফজালের জানাযার নামাজ ছোটদেশ দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় এলাকার হাজারো লোকজন শরীক হন। এ সময় স্থানীয় ইউ.পি চেয়ারম্যান মামুন রশিদনসহ এলাকার লোকজন এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবী জানান। প্রসঙ্গত যে, গত বুধবার মধ্যরাত ২টার দিকে ছোটদেশ গ্রামের আব্দুল জলিলের নির্জন বাড়ীতে ১২/১৫জনের অস্ত্রধারী ডাকাতদল হানা দেয়। ডাকাতরা পাকা একতলা বসত ঘরের কলাপসিবল গেইটের তালা ও ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের সবাইকে জিম্মি করলে বাড়ীর মালিক আব্দুল জলিল শোর চিৎকার শুরু করেন। পিতার চিৎকার শুনে পাশের একটি ঘরে বসবাসরত তার ছেলে ইফজাল উদ্দিন ঘর থেকে বের হয়ে ডাকাতদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তিনি ডাকাতদের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে ইফজাল উদ্দিন মারা যান। দুর্বৃত্তরা ডাকাতি সংগঠিত করে একজন কে হত্যার ঘটনায় সিলেট জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যা ও ডাকাতির সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে নিহতের পরিবারকে আশ্বস্থ করেন। নাজিম উদ্দিন ছাড়া ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত অন্য কাউকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুনুমিয়া জানিয়েছেন ইফজালের খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও আব্দুল জলিলের বাড়ীতে ঘটে যাওয়া বিষয়টি মাথায় রেখে নানামুখি তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাটি ডাকাতি না অন্য কিছু অথবা পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয়েছে কি না তা সামনে রেখে তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু হয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকে জানিয়েছেন ঘটনার সাথে নিহতের নিকট আত্মীয় এমন কেউ জড়িত থাকতে পারেন।
এদিকে গ্রেফতারকৃত এক কুখ্যাত ডাকাতের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির সূত্র ধরে কানাইঘাট থানা পুলিশ জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউ.পির বিলবাড়ী গ্রামের এনাম মিয়ার বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশী তৈরী পাইপগান ও গুলি, ৩টি দামী মোবাইল সেট ও বিপুল পরিমান ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামসহ এক মহিলা কে গ্রেফতার করেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ, ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া সহ পুলিশের একটি টিম স্থানীয় বারহাল ইউ.পির চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ চৌধুরীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সিলেট শহরে বসবাসরত বিলবাড়ী গ্রামের এনাম উদ্দিনের বাড়ীতে অভিযান চালান। অভিযান কালে তার বসতঘর থেকে ১টি পাইপগান, ৫রাউন্ড কার্তুজ, ভারতীয় শিসা গুলি, ৩টি মোবাইল সেট ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি লোহার গ্রিল ও তালা ভাঙ্গার শাবল, যন্ত্রপাতিসহ কিছু এমিটেশন উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় এনাম মিয়ার বসত বাড়ীতে বসবাসরত ভাড়াঠিয়া বিয়ানিবাজার উপজেলার জলডুবা গ্রামের আন্ত:জেলা কুখ্যাত ডাকাত দুলাল মিয়া বক্করের স্ত্রী সীমা বেগম (২৭) কে গ্রেফতার করা হয়। থানার ওসি আব্দুল আহাদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান গত বুধবার মধ্যরাতে কানাইঘাট সদর ইউপির আব্দুল জলিলের বাড়ীতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা হানা দেয় এবং দুর্বৃত্তদের গুলিতে জলিলের পুত্র ইফজাল উদ্দিন নিহতের পর থেকে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ জকিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব খালপার গ্রামের মৃত মইন উদ্দিনের পুত্র কুখ্যাত ডাকাত সাবুল আহমদ (২৭) কে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় তার শ্বশুর বাড়ী কানাইঘাটের কেউটিহাওড় গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। পরে এ ডাকাতের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে সহযোগি ডাকাতদের আটক ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি উদ্ধার করার জন্য থানা পুলিশ জকিগঞ্জ থানার বিলবাড়ী গ্রামের এনাম মিয়ার বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে উল্লেখিত পাইপগান ও গুলিসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার ও ডাকাত দুলাল মিয়ার স্ত্রী সীমা বেগমকে গ্রেফতার করে। সীমা বেগম স্বামীর সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং ডাকাতদের স্ত্রীরা স্বামীর কাজে সহযোগিতা করে থাকেন বলে পুুলিশ জানিয়েছে। অভিযান কালে স্থানীয় ইউ.পি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ চৌধুরী, ইউ.পি সদস্য মখদম আলী, সোলেমান আহমদ, সুমন মিয়া ও মহিলা সদস্যা রিনা বালা মালাকারসহ এলাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন থানার ওসি আব্দুল আহাদ। অভিযানের নেতৃত্বে থানার এসআই আবু কাউছার, এএসআই খোরশেদ আলম, সামুছুল আরেফিন, পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও বাকার উদ্দিন সাহসী ভূমিকা পালন করেন বলে ওসি আব্দুল আহাদ জানান।