মৌলভীবাজার জেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ

74

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বোরো চাষীদের বিপদ যেন কাটছেই না। হাওরে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ফসল নষ্ট হয়েছে। এই ক্ষতির সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে জেলায় ছড়িয়ে পড়া ধানের ব্লাস্ট রোগ। মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলায় কমবেশি বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, জেলায় ৩০/৪০ হেক্টর বোরো জমিতে বিক্ষিপ্তভাবে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আবার এগুলো দমনও হয়েছে। এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সাথে সাথে ধানের মাঝে ঔষদ ছিটিয়ে দিলে এ রোগ চলে যায়।
রাজনগর গড়গাঁও গ্রামের কবির মিয়া ও ইউনুছ হোসেন বলেন, দুইজনে মিলে ১২ বিঘা জমিতে বিআর-২৮ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ঘরের পিছনের জমিতে চাষ করায় প্রতিদিনই জমিতে গিয়ে ধান দেখতেন। সব জমিতেই ধানের ছড়া এসেছে। ভালো ফলনের জন্য তিনি কৃষি বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের সার-বল দিচ্ছিলেন। জমিতে গিয়ে দেখেন ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। ধানের ছড়ার গোড়ায় পছন ধরায় ছড়া গুলো মরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষকেরা। পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ধলিয়ার বন্দে ও ডিগলার গাং এলাকার আশেপাশে বেশ কিছু জমিতের ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। ধানের ছড়াগুলো বেশ বড় হলেও এসব ছড়ার ধানে চাল হবে না বলে জানান কৃষকরা।
মনসুরনগর ইউনিয়নের তারাচুং গ্রামের রফিক মিয়া ঝুনুর মিয়া বলেন, হাওরের ধলিয়ার বন্দে ১৫ বিঘারও বেশি জমিতে এবার বোরো ধান রোপন করেছেন। কয়েকদিন থেকে তার ৫-৬ বিঘা জমির ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। ধানে যে হারে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে এক বিঘা জমিতে ২-৩ মন ধানের বেশি পাওয়া যাবে বলে মনে করেন। একই ইউনিয়নের বানারাই গ্রামের জুবেদ মিয়া,আশিক ও জমির আলী বলেন, এই বন্দে ১৩ বিঘা জমি চাষ করেছেন। তার ধানেও এর মধ্যে যেসব ধানের ছড়া এসেছে ওই সব ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। এবছর ক্ষেতে প্রচুর খরচ করেছি। যদি ধানে কোন সমস্যা হয় তাহলে বাঁচার উপায় থাকবে না। গত তিন মৌসুমে ঘরে ৪০ কেজি ধানও তুলতে পারিনি। এবার ধান না পেলে ঋণের কারণে বাড়ি ছাড়তে হবে।’
হাইল হাওরের কৃষক আলীম উল্ল্যা বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। আমি চিন্তিতো এবার ঘরে যদি ধান উঠাতে না পারি তাহলে কি করে বাচ্ছাকাইচ্ছা নিয়া খাব।’
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ‘নিজে ক্ষেতে গিয়ে দেখেছি এটি ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ। সব মিলিয়ে আক্রান্ত জমির পরিমান বেশি হবে না। এটির প্রতিকারের ঔষুধ বলে দিয়েছি। এক সপ্তাহ স্প্রে করলে রোগ থাকবে না। তবে বোরো ফলনের লক্ষ্যমাত্র অর্জনে বিঘিœত হবে না বলে তিনি মনে করেন।’
মৌলভীবাজার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি মো. শাহজাহান বলেন, মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওর এলাকায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর। সেখানে বোরো চাষ হয়েছে ২২ হাজার ৪৮৩ হেক্টর। মৌলভীবাজার মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ১২ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৪৭১হেক্টর।
তিনি আরও বলেন, জেলার সব এলাকায় মাঝে মাঝে এ রোগ হইছে। আবার সাথে সাথে মেডিসিন দেয়ার কারণে এ রোগ চলে গেছে। কৃষকরা প্রতিদিন ক্ষেতে অবজারবেশন করে থাকে তাহলে এই রোগে আক্রমণ করার কথা না। কুলাউড়ায় ১০জন কৃষকের ধানে চিটা হয়েছে তারা আমাকে জানিয়েছে। নরমাল ধানে ১৫/২০ পার্সেন্ট চিটা হয়। যেসব এলাকাগুলোতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে, সেখানে ধানের কোনো ক্ষতি হতে দেখা যায়নি।’