একের পর এক জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতার মুক্তি, সরকারের সঙ্গে আপোষরফার ইঙ্গিত

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
একমাসের ব্যবধানে জামিনে মুক্ত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সারির অন্তত পাঁচ নেতা। একইসঙ্গে সারাদেশের নেতাকর্মীরাও জামিন পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছেন। হঠাৎ করে একের পর এক জামায়াত নেতার মুক্তিতে দলের ভেতরেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। এসব মুক্তি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সঙ্গে কোনও ধরনের আপোষরফার ইঙ্গিত কিনা, এ নিয়ে খোদ দলটির নেতাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
সরকারের প্রভাবশালী একটি সংস্থার সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছাড় নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপিকে ছেড়ে এককভাবে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করবে। তবে এখনও সবকিছু পরিষ্কার নয়।
তবে জামায়াত শীর্ষ নেতারা দাবি করেছেন, সরকারের সঙ্গে কোনও ধরনের সমঝোতা বা আপসরফা নয়, বরং দীর্ঘ আইনি লড়াই করেই নেতারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও পরিকল্পনা নেই দলটির। এখনও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়েই সিদ্ধান্ত রয়েছে।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই জামিন লাভ করেন, কিন্তু তাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে আবার কারাগারে আটকে রাখা হয়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল, তাদের প্রত্যেকের পর্যায়ক্রমে জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে ভিন্ন কোনও পয়েন্ট নেই।’
অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতারাও তো অনেকে বের হচ্ছে। এগুলো স্বাভাবিক। এই মামলাগুলো নিপীড়নমূলক, কেউ স্বাভাবিকভাবে গ্রেফতার হয়নি। একটা মামলা নিয়ে গ্রেফতার হলে পরে পাঁচটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।’
গত ২১ মার্চ জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। কাছাকাছি সময়ে মুক্তিলাভ করেন নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার। গত বছরের অক্টোবরে গ্রেফতার হওয়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল দুই সপ্তাহ আগে মুক্তি পান। গত সপ্তাহে জামায়াতের সাবেক নেতা মাওলানা আতাউর রহমানের মৃত্যুতে মুক্তি পান তার মেয়েজামাই ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়া জামায়াতের নেতা ও মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী মুক্তি পান কারাগার থেকে। তাদের প্রত্যেকের মুক্তির খবর চেপে রাখে জামায়াত।
যদিও এখনও জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান কারাগারে আছেন। আমির গত বছরের অক্টোবরে আটক হন উত্তরা থেকে আর নায়েবে আমির গ্রেফতার হন গত মার্চে। জামায়াতের একনেতা আশা প্রকাশ করেন, মকবুল আহমাদের মুক্তি দীর্ঘায়িত হলেও অধ্যাপক মুজিব জামিনে বেরিয়ে আসবেন।
জামায়াতের ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সন্দেহ, শীর্ষ নেতাদের মুক্তিতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাবনা থাকতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনে জামায়াতকে জোট থেকে বের করে আনা, এককভাবে নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের আগ্রহ থাকতে পারে। আর দলীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে এখনও সুনির্দিষ্ট করে মুক্তির বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ না হওয়া, নেতাদের মুক্তির বিষয়টি গোপন রাখা, এসব বিষয় তাদের সন্দেহ আরও জোরালো করে তুলেছে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার একজন প্রভাবশালী সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর আঞ্চলিক দায়িত্বে থাকা একজন নেতা সন্দেহের বিষয়টি মিথ্যে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কখনও জামায়াতের সমঝোতার হওয়ার সুযোগ নেই। এটা অসম্ভবও।’
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এগুলো অযাচিত সন্দেহ। নিয়মিত আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই নেতারা মুক্ত হচ্ছেন। এছাড়া আমিরে জামায়াত, নায়েবে আমির এখনও কারাগারে। আমরা এখনও আশাবাদী, ২০ দলীয় জোটের সঙ্গেই নির্বাচন করবো।’