প্রতিপক্ষ

139

॥ আবু মালিহা ॥
সাংঘাতিক রূপে ক্ষেপে উঠলো বিড়াল ছানাটি। সরোষে ধাওয়া করে ইঁদুরটির দিকে, কিন্তু ধরতে পারেনা! কারণ বাড়ীর আঙ্গিনার পাশে ছোট একটা গর্তে চোখের পলকে ঢুকে পড়ে। বাড়ীটির পরিবারের ছোট একটা ছেলে বিড়ালটিকে খুব ভালোবাসে। খাবার দাবার থেকে কোলে তুলে আদর সোহাগ সবকিছুই করে। অতএব পোষ্য বিড়াল খুব ভালভাবেই খেয়ে পরে সুখে আছে ছোট ছেলে রুহুলের কাছে। কারণ বিড়াল পোষা তার সখ। চোখের আড়াল করা যায়না। সারাক্ষণ কোলে পিঠে এমনকি রাতে বিছানায় ঘুমানোর সময়ও বুকের কাছে রেখে ঘুমায়। পরম মমতায় ভালোই দিন কাটছে। চিরসুখী জন যাকে বলে।
তবে মাঝে মধ্যে বাধ সাধে বাড়িটির পাশের গর্ত থেকে উঠে আসা ইঁদুরটি। তাই মাঝে মধ্যে বিড়ালটি ক্ষেপে গিয়ে খপ করে ধরতে চায়। তবে খাবার লোভে যে তাকে তাড়া করে তা কিন্তু নয় অনেকটা জাত শত্র“ বলেই এমন ধরনের হামলার হুমকি। আবার মাঝে মধ্যে সখের খাবার হিসেবেও ধরে মুখে পুরে। কিছুটা খায় আবার রেখেও দেয়। স্বভাবের বসে এমন আচরণ খুবই স্বাভাবিক।
তবে মানুষের কাছে বিড়াল খুবই প্রিয় এবং বাড়ীতে দুধ-ভাত দিয়ে যতœ করে পোষা একটা সৌখিন পারিবারিক সৌন্দর্যও বলা যেতে পারে! তবে বিড়ালের প্রতি মমতা রসূল (স:) এর ছিল। তাই তিনি বলেছেন বেশী বিরক্ত করলে এক আঘাতে মেরে ফেলতে হবে। কিন্তু কষ্ট দেয়া যাবেনা। সেদিক থেকে এটি একটি আদর্শিক চেতনা বিড়ালকে মহব্বত করা।
তবে বিড়ালের স্বভাবজাত কিছু দোষ আছে যেমন- আমরা কাউকে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান হলে বিড়াল তপস্বী বলেই আখ্যায়িত করি। কেননা লুকোচুরিতে উদ্দেশ্য হাছিলে সে খুব সিদ্ধহস্ত। অনেক ক্ষেত্রে সমাজের কিছু লোক কপট প্রকৃতির হয় এবং নিরবে অতি সন্তর্পণে অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ হাছিলে বেশ তৎপর থাকে। সামাজিক জীবন পরিবেশে অনেক ক্ষেত্রে এদের ধরা সহজ হয় না। কিন্তু ইঁদুর একটি প্রাণী যা হিতকর কোন কাজ সে করে না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষের ক্ষতির কারণ। সবকিছু কেটে কুটে এবং ছিন্ন-ভিন্ন করে সয়লাব করে দেয় সুুষ্ঠু এবং সুন্দর পরিবেশকে। লেপ, কাঁথা, কম্বল সহ অনেক কাপড়-চোপড় নষ্ট করে। খাবার দাবার দ্রব্য সামগ্রীগুলোকে নষ্ট করে রোগ-বালাই ছড়াতে তার জুড়ি নেই।
অতএব ইঁদুর সর্বদাই ক্ষতিকারক প্রাণী। মনুষ্য স্বভাবের সে পরম শত্র“। বিষক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে ধ্বংস করতে মানুষ সদা তৎপর থাকে। এদের প্রতি অহিংস(!)নীতি অবলম্বন মানেই মানুষ এবং শস্য ক্ষেত্রের ধংস সাধনে প্রশ্রয় দেয়া, তাই তাকে লালন করা বা প্রশ্রয় দেয়া কোন অর্থেই মানবিক নয়। তার মৃত্যু কামনাই পরম লক্ষ্য। যদিও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে তার অস্তিত্ব টিকে থাকা অপরিহার্য। যার কথা হলো বিড়াল তপস্বীদের থেকে সচেতন থাকতে হবে এবং ইঁদুর প্রকৃতির মনুষ্য পরিবেশ থেকে সমাজকে হেফাজত করতে হবে। তবে প্রকৃত অর্থে ইঁদুর বিড়াল সৃষ্টির কৌশলে হিতকর কিন্তু সমাজ চরিত্রে আচরণের কু-প্রভাব ক্ষতিকর। সম্যক এ জ্ঞান সমাজ অর্জন করতে পারলে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। হিত কামনা থাকবে সকলের তরে। অতএব বিড়াল-ইঁদুরের প্রতিপক্ষ।