তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা :
হাওর জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির অসংখ্য ধান। সময়, বাস্তবতা এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে অধিক ফলনের আশায় উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষক। স্বল্প খরচ ও পরিবেশবান্ধব দেশীয় প্রজাতির ধান চাষ এখন সুদূর অতীত। ৯০ দশকেও হাওরে হাওরে শুধু মাত্র দেশী প্রজাতির ধান চাষাবাদ করা হত। ২ হাজার পরবর্তী সময় থেকে ধীরে ধীরে তাহিরপুরের হাওরে হাওরে চাষাবাদ হচ্ছে উচ্চফলনশীল ধান। বর্তমানে হাওরের পথ ধরে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত গেলেও তেমন একটা চোখে পড়ে না দেশী জাতের ধান। হাতে গুনা দু’একজন কৃষক কিছু দেশী প্রজাতির ধান চাষাবাদ করেন। তা একেবারেই কম। যা চোখে পড়ার মত না।
সরজমিন উপজেলার শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া হাওর সহ একাধিক হাওর ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। বিস্তীর্ণ সবুজের সমারোহে এখন শুধু উচ্চ ফলনশীল ধান চাষাবাদ করছেন কৃষক। তাহিরপুর উপজেলা সহ সুনামগঞ্জ জেলায় যেসব দেশীয় প্রজাতির ধান ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নাজিশাইল, লাকাই, গচি, বাইগুন বিচি, ধলকাচাই, গড়িয়া, মৌমাইল, পানি শাইল, টেপি, রঙ্গিলা টেপি সহ প্রায় ২০ প্রজাতির প্রকৃতি বান্ধব দেশী প্রজাতির ধান কালের গর্ভে হাওরাঞ্চল থেকে বিলীন হয়ে গেছে। দুএকটা প্রজাতি যতসামন্য টিকে থাকলে আগামী দুএক বছরের মধ্যে তাও বিলীন হয়ে যাবে বলে কৃষকদের ধারণা। বর্তমানে শুধুমাত্র লাকাই ধান নাম মাত্র কিছুটা চাষাবাদ করছেন দু’একজন কৃষক।
শনির হাওর পার বসন্তপুর গ্রামের কৃষক নুর জামান মিয়া তিনি বলেন, দেশী ধানে ফলন কম এ কারণেই তিনি উচ্চফলনশীল ধান চাষাবাদ করেন। চলতি বছর তিনি শনির হাওরে ২ একর জমিতে ব্রি আর-২৮ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান চাষাবাদ করেছেন।
শনির হাওর পার উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক নুরুল হক মিয়া জানান, পরিবারের খাবার ধান সংগ্রহ করার জন্য তিনি কিছু জমিতে লাকাই ধান চাষাবাদ করেছেন। তার মতে দেশী জাতের ধানের চাল খেতে স্বু-স্বাদু।
গবেষক পাভেল পার্থর মতে হাওরাঞ্চলে দেশী জাতের ধান যত দিন চাষাবাদ ছিল ততদিন গ্রামে গ্রামে পিঠা পায়েস, চিড়া, খই, মুড়ি তৈরির ধুমও ছিল। এখন সেটা তেমন আর চোখে পড়ে না। তিনি আরও বলেন, সরকার ও কৃষক পর্যায়ে যদি দেশি জাতের ওইসব ধান সংরক্ষণ করা না যায় তা হলে পরবর্তী প্রজন্ম এ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস ছালাম বলেন, বেশি ফলনের আশায় হাইব্রিড জাতের ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। এতে দেশি জাতের ধান হারিয়ে যাচ্ছে।