কাজিরবাজার ডেস্ক :
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে আবারও বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। সরকার চায় আগামী এপ্রিলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমাদানি শুরু থেকে বাড়তি দামে বিক্রি করতে। এতে জ্বালানিখাতে সরকারকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না। যদিও এজন্য দেশের বিদ্যুৎ ও শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ে আলোচনা করতে সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গিয়েছিলেন জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। কমিশনের একজন সদস্য বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী ২৫ এপ্রিল এক্সিলারেট এনার্জির নির্মাণ করা মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদনে আসার কথা। কাজেই এপ্রিল থেকেই গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।তবে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে সম্মত হননি কেউ। বৈঠকটিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম ও জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও কমিশন সদস্য, জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। দুই ধাপে গড়ে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ায় বিইআরসি। প্রথম ধাপ ১ মার্চ এবং দ্বিতীয় ধাপ ১ জুন থেকে কার্যকর হয়।
প্রায় একই সময় এলএনজির দাম নির্ধারণে একটি কমিটি করে জ্বালানি বিভাগ। বিইআরসির সদস্য রহমান মুরশেদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটিতে জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বুয়েট, আইবিএ এবং বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রতিনিধি ছিলেন।
ওই সময় কমিটির সুপারিশে বলা হয়, এলএনজি আমদানির জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। এই অর্থ সংস্থানের জন্য প্রতি বছর গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ দিয়ে তহবিল গঠন করা যেতে পারে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট মওকুফ করা দরকার।কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের বিক্রয়মূল্য পড়ে ২ ডলার ১৭ সেন্ট। অন্যদিকে প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির দাম ৮ মার্কিন ডলার ও গ্যাসে রূপান্তরের খরচ হবে ০ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার। এলএনজি আমদানি করতে আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, টার্মিনাল চার্জ, সঞ্চালন চার্জ, বিতরণ চার্জ, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটসহ নানা ধরনের খরচ করতে হয়। এই খরচসহ এলএনজির বিক্রয় মূল্য গিয়ে দাঁড়াবে ২৩ ডলার ১১ সেন্টে। এসডি/ভ্যাট মওকুফ করা হলে এলএনজির দাম হবে ১০ ডলার ৪০ সেন্ট, যা দেশীয় গ্যাসের চেয়ে প্রায় ৮ ডলার বেশি।
এ অবস্থায় কমিটি দুই ধরনের জ্বালানি মিশিয়ে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে। এক্ষেত্রে এলএনজি ও দেশীয় গ্যাস মিশিয়ে বিক্রি করা হলে দাম হবে ৪ ডলার ৩৫ সেন্ট। এই হিসাবেই ওই সময়ই দেশীয় গ্যাসের দাম প্রতি বছর কমপক্ষে ২ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করে কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।দেশের গ্যাসের তুলনায় এলএনজির দাম বেশি। ফলে এলএনজি আমদানি শুরু হলে গ্যাসের দাম সমন্বয় করতেই হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিইআরসি চাইলেই তো দাম বাড়াতে পারবে না। আর বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রয়োজন মনে করলে যেকোনও সময় দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে। এছাড়া দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেই দাম বাড়ানো যায় না। এ জন্য প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হবে। এরপর গণশুনানি হবে। এরপরই সবার অভিমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার এলএনজি আমদানি করতে চাইছে ঠিকই। কিন্তু এই বেশি দামের গ্যাস তো সাধারণ মানুষ পাবে না। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করার পরিকল্পনা করেছে। কারণ এই উচ্চমূল্যের গ্যাস বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এই গ্যাস মূলত শিল্পে ব্যবহার করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণের ঘাড়ে গ্যাসের দামের বোঝা চাপিয়ে সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিইআরসির সদস্য আব্দুল আজিজ খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এসেছিলেন। গ্যাসের দাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা গ্যাসের দাম সমন্বয়ের কথা বলেছে। তবে বিইআরসির একার পক্ষে তো দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। এটি একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো যদি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়, তাহলে তা মূল্যায়ন করা হবে।’ এপ্রিলে দাম বাড়ানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি এখনই বলা সম্ভব নয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রস্তাব দিলে মূল্যায়নের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কবে নাগাদ গ্যাসের দাম বাড়তে পারে।’