কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইয়াবা ও মানবপাচার, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ইভটিজিং, মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এমন ৬০৭ জন রোহিঙ্গাকে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। একই সময়ে ৪২ জন ইয়াবাপাচারকারীর কাছ থেকে প্রায় ১৬ লক্ষ ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব।
গত ৪ মাসে হত্যা, চুরি, ডাকাতি, মাদক পরিবহন ও বিকিকিনি, মারামারি ও মানবপাচারের অভিযোগে ২৮ টি মামলায় ৪১ জন আসামিকে আটক করেছে পুলিশ। আর আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, দাসহ ১১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাব।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের সহায়তায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও ১০ লক্ষ বাস্ত্যুচুত রোহিঙ্গাকে একটি নিয়মের মধ্যে আনতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব কাজ করছে। উখিয়া ও টেকনাফে ১০ জন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২৫ আগস্টের পর থেকে বেসরকারি হিসেব মতে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করেছে। এখনো প্রতিদিন নানাপথে কমবেশী রোহিঙ্গা আসছেই। এত বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, জেলার বাইরের ৭৫৫ জন পুলিশসহ উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১ হাজার ২০০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছে। এছাড়া সাদা পোশাকে ১০০ জন পুলিশ সেখানে রয়েছে। ৩ জন সহকারী পুলিশ সুপার ও ১৪ জন ওসির অধীনে রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে লক্ষ্যে টেকনাফ-কক্সবাজার রোড়ে পুলিশের ১১টি তল্লাশী চৌকি, র্যাবের ২টি এবং বিজিবি’র ২টি তল্লাশি চৌকি রয়েছে।
একাধিক তল্লাশি চৌকি রয়েছে সেনাবাহিনীরও।
টুটুল আরো বলেন, নানা অপরাধে জড়িয়ে থাকার কারণে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ৫৫০ জন রোহিঙ্গাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সর্ব্বোচ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ২ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা পাচার, মানব পাচার, খুন, মারামারি, পুলিশ এসল্টসহ বৈদেশিক আইনে ২৮ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রায় সময়ই নতুন আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করছে পুলিশ। গড়ে প্রায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার করে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।
২ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল এস.এম আরিফুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেক ছোটখাট অপরাধের ক্ষেত্রে সাবধান করে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যদি এমনটি না করা হয় তাহলে আমাদের কারাগারে জায়গা সংকুলান হবে না।
তিনি আরো বলেন, বিজিবি’র ২৪ জন পাচারকারীর কাছ থেকে ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৭৮৫টি ইয়াবা উদ্ধার করেছে। একই সময়ে টাকার বিনিময়ে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের পারাপার, আশ্রয়ের নামে অর্থ আদায়সহ নানা অপরাধে ৫১ জন রোহিঙ্গাকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে নুন্যতম ৬ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে র্যাব ৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, বানের জলের মত যখন রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করছিল সেই সময়ে র্যাব সেখানে কাজ করেছে। আমরা একমাসের মত ক্যাম্প ও সীমান্তে কাজ করেছি। সেই সময়ে ১১ জন রোহিঙ্গাকে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করেছি।
তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছি। এছাড়া ৫ জন রোহিঙ্গাকে ৮ লক্ষ ৯ হাজার ৮০০ টি ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ জন রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনের দেওয়া ৩ জন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের ২ জন এসিল্যান্ড ও ৪ জন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছেন। এ পর্যন্ত তারা ৬০৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন।