স্টাফ রিপোর্টার :
পাওনা টাকা চেয়ে আদালতে মামলা করায় এক ব্যক্তিকে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন আদিবাসী কোচ সম্প্রদায়ের সদস্য, নগরীর টিলাগড়স্থ গোপালটিলার বাসিন্দা নগেন্দ্র চন্দ্র বর্মন।
তিনি অভিযোগ করেন, তার সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার আওয়ামী লীগ নেতা বিজিত চৌধুরীর কাছে তিনি সাড়ে ৪ কোটি টাকা পান। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও সেই টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি সম্প্রতি সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। এই মামলা দায়েরের পর থেকে বিজিত চৌধুরী নগেন্দ্র বর্মন, তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নগেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, তার মূল বাড়ি জামালপুর জেলায় হলেও ১৯৮৪ সাল থেকে সিলেটে বসবাস করছেন। সিলেটে তার ফার্ণিচারের ব্যবসা রয়েছে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন নামি ফার্ণিচার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের তৈরী ফার্ণিচার সিলেটে এনে বিক্রি করতেন। তার নিজের মালিকানায় কুমারপাড়ায় সিলেট মেট্রো ফার্ণিচার এবং তার স্ত্রী রাঙ্গা সিনহার মালিকানায় মিরাবাজারে সিলেট সিটি ফার্ণিচার-১ এবং আম্বরখানায় সিলেট সিটি ফার্ণিচার-২ নামের মোট ৩টি ফার্ণিচারের দোকান রয়েছে। সিলেটে ব্যবসা বাণিজ্য করে তিনি টিলাগড় গোপালটিলা এলাকায় বাসাবাড়ি নির্মাণ করে ২ সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ব্যবসায়িক কারণে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট মৌবন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মৃত নগেন্দ্র চৌধুরীর পুত্র, আওয়ামী লীগ নেতা বিজিত চৌধুরীর পরিচয় হয় এবং এক পর্যায়ে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০০৯ সালে বিজিত চৌধুরী আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। প্রাণ বাঁচাতে আমি সে সময় তাকে দুই লাখ টাকা চাঁদা প্রদানে বাধ্য হই। এরপর ২০১১ সালে নগেন্দ্র বর্মন চাপে পড়ে তার ব্যবসায় আওয়ামী লীগ নেতা বিজিত চৌধুরীকে বিনিয়োগ বিহীন পার্টনার করেন। বিজিত চৌধুরী জোরপূর্বক নগেন্দ্র বর্মন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে ব্যাবসায়িক অংশীদারী চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর বিজিত চৌধুরীর তার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাস করতে তাকে জোরপূর্বক বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, প্রাণভয়ে নগেন্দ্র সে কথা কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেননি। অংশীদারী চুক্তিনামার অজুহাত দেখিয়ে ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নগেন্দ্র বর্মনের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ৩ কোটি টাকা ও তার স্ত্রী রাঙ্গা সিনহার কাছ থেকে ১ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন। নগেন্দ্র বর্মন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তার নামে এবং হতর স্ত্রীর নামে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিপুল অংকের ঋণ গ্রহণ করে সে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছেন।
নগেন্দ্র সিংহ অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালে বিজিত চৌধুরী প্রতারণামূলকভাবে আমার মালিকানাধীন গোপালটিলার বাসাটিও ১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে আমি প্রতিবাদ করলে বিজিত চৌধুরীর পালিত মাস্তান বাহিনী ২০১৫ সালে ২৯ এপ্রিল আমাকে শাহী ঈদগা এলাকায় আটক করে একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে গিয়ে অনেকগুলো স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় ও আমার সাথে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় পর আমি কোতয়ালী থানায় মামলা দিতে চাইলেও বিজিত চৌধুরীর হুমকির কারণে মামলা দায়ের করতে পারিনি। তবে, এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-৫৫৯, তাং-১১/০৫/২০১৫ইং) দাখিল করি।
লিখিত বক্তব্যে নগেন্দ্র বর্মন আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বিভিন্ন মহলের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিজিত চৌধুরী তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে কিছু সংখ্যক শুভাকাঙ্খীর মধ্যস্ততায় আমাদের টাকাগুলো ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন এবং সংক্রান্ত একটি অঙ্গীকারনামাতেও স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এরপর প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কোন টাকা না পাওয়ায় আমি নিজে বাদী হয়ে সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা (নং-১৫৭২) এবং আমার স্ত্রী রাঙ্গা সিনহা বাদী হয়ে একই আদালতে আরেকটি সিআর মামলা (নং-১৫৭৩) দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ তদন্তের জন্য পিবিআই কে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ মামলা দায়েরের পর থেকে বিজিত চৌধুরী মোবাইল ফোনে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আমি শাহপরাণ (র.) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেছি এবং অনুলিপি মাননীয় অর্থমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মহলের কাছে প্রেরণ করেছি।
নগেন্দ্র বর্মন বলেন, বর্তমানে আমি স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। নগেন্দ্র বর্মন এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।