কাজিরবাজার ডেস্ক :
পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে হত্যাযজ্ঞের দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালেতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১ জন মারা গেছেন।
বাকি ১২ জনের মধ্যে ৮জনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও অন্য চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালত রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রয়েছে। বাকি ১৪ জনের মধ্যে দু’জন আগেই মারা গেছেন। আর অন্য ১২ জন খালাস পেয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জনের সাজা চেয়ে ফৌজদারি আপিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন ও চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর অন্য ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রয়েছে।
সব মিলিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন ১৮৫ জন।
এদিকে বিচারিক আদালত ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বাকি ২৫৩ জনের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছর করে, দুইজনকে ১৩ বছর করে, ৮ জনকে সাত বছর করে এবং চারজনকে ৩ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এখান থেকে খালাস পেয়েছেন ২৯ জন। অবশ্য ২৮ জন আপিলই করেননি।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে আলোচিত এ মামলা রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) হাইকোর্ট বেঞ্চ।
বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
উচ্চ আদালতের এ রায়ের পর জীবিত ৮৪০ জন আসামির মধ্যে ১৩৯ জন মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২২৮ জন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে অর্থাৎ ৫৫২ জন দণ্ডিত হলেন। বাকি ২৮৮ জন খালাস পেলেন।
সোমবার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিট থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচিত হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণার শুরুতে পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
তার পড়া শেষে রায়ের মূল :
অর্থাৎ সাজার অংশ পড়েন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন। পরে মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে দুপুর আড়াইটা থেকে রায়ের মূল অংশ পড়া শুরু করেন আদালত। এর আগে রবিবার (২৬ নভেম্বর) প্রথম দিনের মতো রায় পড়া হয়।
গত ১২ নভেম্বর থেকে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ২৬ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয় আপিল মামলাটি। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি এবং যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে হাইকোর্ট গত ১৩ এপ্রিল মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত।
পাশাপাশি অস্ত্র লুটের দায়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডও দেওয়া হয় তাদের।
জীবিত ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে আরও ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়। মামলার মোট ৮৫০ জন আসামির বাকি ৪ জন বিচার চলাকালেই মারা গেছেন।
ওই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার চলছে বিচারিক আদালতে।
হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জনের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে হাইকোর্টে ফৌজদারি আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দায়ের করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪১০ জন আসামির সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা।
পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড ও কয়েকজনের সাজা বাড়াতে আরও দু’টি আবেদন জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। তবে দেরিতে আবেদন করায় গত ১৩ এপ্রিল আবেদন দু’টি বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।
আপিল করলে গত ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের বাতিলের আদেশটিই বহাল রাখেন।
২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। পরদিন ৫ জানুয়ারি বিশেষ বেঞ্চ বসে ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন।
২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়ে গত ১৩ এপ্রিল ৩৭০ কার্যদিবসে শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন, ফকির ও মোশাররফ হোসেন কাজল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার, শেখ বাহারুল ইসলাম ও জাহিদ সরওয়ার কাজল ।
আসামিপক্ষে ছিলেন- এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল বাসেত মজুমদার, মহসীন রশীদ, এস এম শাহজাহান, এ এস এম আবদুল মুবিন, মো. আমিনুল ইসলাম, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদার প্রমুখ। আর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন হাসনা বেগম।