পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অনুমোদনহীন রেলের লেভেল ক্রসিং-এ একটি মাইক্রোবাসে ঢাকাগামী আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনেসহ ৯জন যাত্রী আহত হয়েছেন। ট্রেনের গতি কম থাকায় মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে খাদে পড়ে গেলেও অল্পের জন্য যাত্রীরা প্রাণে বেঁচে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় কমলগঞ্জের ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে ১ কি:মি: দূরে বালিগাঁও গ্রামের গরম শাহের মাজার সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাটি রহস্যজনক কারণে গোপন রাখেন ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ঘটনাটি জানা জানি হলে, শুক্রবার সকালে সরেজমিন গেলে প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসীরা জানান, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের সত্তান মিয়ার মেয়ে রিমা আক্তার(১৯)কে বিয়ে করে বাড়ি ফিরছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশ্বিদুন ইউনিয়নের বিষামনি গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে নাঈম উদ্দীন (২২)। বর-কনেকে নিয়ে সাদা রংয়ের একটি নোহা মাইক্রোবাস শ্রীমঙ্গল ফিরছিল। কমলগঞ্জের ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে বালিগাঁও গ্রামের গরম শাহের মাজার সংলগ্ন রেলের লেভেল ক্রসিং অতিক্রমকালে মাইক্রোবাসটি রেলপথের উপর আটকা পড়ে। এ সময় ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন এসে মাইক্রোবসাটিকে ধাক্কা দেয়। ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনে ও যাত্রীসহ মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় বর নাঈম উদ্দীন, কনে রিমা আক্তার, বরের ছোট ভাই শাহীন মিয়া (৮), স্বজন মারুফা আক্তার (১৩),শাহাব উদ্দীন (২২), কালা মিয়া (৬০) ও চালকসহ মোট ৯জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত শিশু শাহীন মিয়া ও বৃদ্ধ কালা মিয়াকে রাতেই মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাব উদ্দীন ফকির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনার আধা ঘন্টা পর তিনি তা জেনেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বা শ্রীমঙ্গলস্থ রেলওয়ে থানাকে অবহিত করনেনি বলেও জানান। তিনি আরও বলেন, এ লেভেল ক্রসিংটি অনুমোদনহীন। এ দুর্ঘটনায় তাদের করার কিছু নেই।
শ্রীমঙ্গলস্থ রেলওয়ে থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত ভানুগাছ স্টেশন থেকে কেউ তাকে এ ঘটনা জানায়নি। স্টেশন মাস্টার দুর্ঘটনার তথ্য জানানো উচিত ছিল বলেও তিনি জানান। তবে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানার এসআই আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে সন্ধ্যা রাতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। কমলগঞ্জ থানার এসআই আজিজুর রহমান দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে করে বলেন, ঘটনাস্থল রেলওয়ে পুলিশ থানাধীন। তাই তারাই এ ঘটনার তদন্ত করবেন। আর মাইক্রোবাসটিও মালিক পক্ষ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: সাজেদুল কবির ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়ে মাইক্রোবাসের বর-কনেসহ যাত্রীরা এখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহনের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, এদের মাঝে শিশু শাহীন ও বৃদ্ধ কালা মিয়াকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।