স্টাফ রিপোর্টার :
দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস পর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছেলেসহ মুক্তি পেলেন শিল্পপতি রাগীব আলী। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর গতকাল রবিবার বেলা সোয়া ১টায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই কারামুক্তি লাভ করেন। কারা ফটকে তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। পরে তাকে মালনীছড়াস্থ বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাগীব আলী ও তার ছেলে কারামুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের সিনিয়র জেলার মো: আব্দুল জলিল।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন সুপ্রীম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ থেকে তারাপুর চা বাগানের ভূমি বন্দোবস্তের নামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলায় জামিন পান তারা দুজন। এছাড়া, তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং দৈনিক সিলেটের ডাক প্রকাশনা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন তারা। তিনটি মামলায় জামিন লাভের পর তাদের কারামুক্তিতে কোন বাধা ছিল না বলে জানান তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি।
১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত তৎকালীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা-বাগান অবৈধ দখল, বিধি-বহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণের প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে সংসদীয় উপকমিটি চা-বাগানে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। এই সুপারিশের প্রেক্ষিতেই ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল হাই বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালী থানায় দুটো মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলা দুটির কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৬ সালে ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তারাপুর চা-বাগান পুনরুদ্ধারের রায় দেন। রায়ে ওই মামলা দুটি সক্রিয় করার নির্দেশনাও দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনার বিষয়ে গত ১৬ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতকে অবহিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত এপ্রিল মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলা দুটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই। গত বছরের ১০ জুলাই তারাপুর চা বাগান লিজের ক্ষেত্রে স্বাক্ষর জালিয়াতির মামলাটির চার্জশিট দাখিল পিবিআই। চার্জশিটে অভিযুক্ত করা রাগীব আলী ও তার পুত্র আবদুল হাইকে।
এরপর গত ১০ আগষ্ট রাগীব আলীসহ আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর ছেলেকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করেন রাগীব আলী। পরে ২৪ নভেম্বর দেশে ফেরার পথে গ্রেফতার হন রাগীব আলী। ওই দিনই আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এছাড়া, ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। ২ ফেব্র“য়ারি স্মারক জালিয়াতি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইর বিভিন্ন মেয়াদে ১৪ বছরের কারাদন্ড হয়। ৬ এপ্রিল তারাপুর চা বাগানের ভূমি আত্মসাতের মামলায় রাগীব আলী ও তার পরিবারের ৫ সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদী সাজা হয়। এছাড়া, পলাতক থেকে দৈনিক সিলেটের ডাক-প্রকাশের অভিযোগে ছেলেসহ রাগীব আলীর আরো এক বছরের কারাদন্ড হয়।