কে.এম.লিমন, গোয়াইনঘাট থেকে :
সিলেটের সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাটের তামাবিলে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্থল বন্দরটির শুভ উদ্বোধন হবে আজ (শুক্রবার)। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. নজিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করবেন বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ। জানা যায় ২০১৫ সালের ৮ মে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান তামাবিল স্থল বন্দর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভূমি ও স্থল বন্দরের সার্বিক উন্নয়ন সহ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬৯ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ২৮ মাসে লাগাতর কাজের মধ্য দিয়ে স্থল বন্দরটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
জানা যায়, স্থল বন্দরে উন্নীতের ঘোষণার প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৫ সাল থেকে স্থল বন্দরের জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় ২০১৬ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু আশ্বাস দেওয়া হলেও নির্মান কাজের ধীরগতির কারণে গত বছরে তা চালু হয়নি। তামাবিল দিয়ে প্রধানত কয়লা, চুনাপাথর, পাথর ও ফল আমদানি করা হয় এবং প্রসাধন সামগ্রী, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও ইট রফতানি করা হয়। তামাবিলে কোন স্থাপনা না থাকায় এতোদিন আমদানিকারকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়া করা জায়গায় আমদানিকৃত মালামাল সংরক্ষণ ও লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ করতেন বলে জানান আমদানীকারকরা। দেশের ব্যস্ততম এই শুল্ক স্টেশনে ওয়েটব্রিজ না থাকায় আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের সঠিক ওজন পরিমাপ করতে না পারায় সরকারও প্রচুর পরিমাণ শুল্ক হতে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মন্তব্য শুল্ক কর্মকর্তাদের। তামাবিলে স্থল বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে সিলেটের কাছাকাছি থাকা ভারতের সাত রাজ্যের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে আশা তাদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুল্ক স্টেশনকে বন্দরে উন্নীতের কার্যক্রমের মধ্যে ২৩.৭২ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ নয় হাজার ৩৩০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, দুই হাজার ৫০০ মিটার সীমানা দেওয়াল তৈরি, আট হাজার ১৮০ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, ২৭ হাজার বর্গমিটার ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড নির্মাণ, ৭৪৪ বর্গমিটার ওয়্যারহাউস নির্মাণ, এক হাজার ৩৪৯ বর্গ মিটার অফিস, ডরমেটরি ও ব্যারাক ভবন নির্মাণ, দুই হাজার মিটার ড্রেন নির্মাণ, দুটি ওয়েটব্রিজ ও দুটি ১০০ মেট্রিকটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ওয়েহিং স্কেল এবং পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া কম্পিউটার ফটোকপি, জীপসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ক্রয় করা হয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) মো. হাবীবুর রহমান বলেন, সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ শুক্রবার এই স্থলবন্দর চালু হতে যাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি ইতিপুর্বে সম্পন্ন করা হয়েছে।
তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানি কারক গ্র“পের সভাপতি এম লিয়াকত আলী বলেন এই স্থল বন্দরটি চালু হওয়ার পর ভারতের মেঘালয় সহ ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, আসাম ও ভুটানের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে। একই সাথে সরকার জেমন প্রতি বছর এই স্থল বন্দর থেকে শত কোটি টাকারও অধিক রাজস্ব আয় করবে ঠিক তেমনই অনেক শ্রমিকেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।