কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
সীমান্তবর্তী এলাকার দরিদ্র মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিঃ মিঃ দূরবর্তী অবস্থিত সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ৫০ শয্যায় হাসপাতালটি উন্নীত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এলাকার রাজনৈতিক মহল, জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের মানুষ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যাতে করে উপজেলা হাসপাতালে এসে সঠিক চিকিৎসা সেবা পান এজন্য দেশের অধিকাংশ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কানাইঘাট উপজেলার পাশর্^বর্তী জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট উপজেলা হাসপাতালকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় ইতিমধ্যে উন্নীত করা হয়েছে। এলাকাবাসী সীমান্তবর্তী এলাকার নি¤œ ও মধ্যমায়ের মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নতির দাবী জানিয়ে আসলেও অদ্যবধি পর্যন্ত দাবীটি আলোর মুখ দেখেনি। কানাইঘাটবাসীর প্রত্যাশা বর্তমান সরকারের আমলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। সিলেটের মধ্যে সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলা একটি অবহেলিত জনপদ। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার মধ্যে বসবাস করেন। হাসপাতালে এসে আধুনিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনার স্বীকার হন ভুক্তভোগীরা। হাসপাতালে সব সময় অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ শূন্য থাকায় উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অধিকাংশ রোগীদের সিলেট শহরে যেতে হয়। এতে নি¤œ ও মধ্যমায়ের জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হন। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও উপজেলাবাসীর আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য কানাইঘাটের সচেতন মহল নানা সমস্যায় জর্জরিত উপজেলা হাসপাতালের এমবিবিএস ডাক্তারদের শূন্যপদ পূরণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে গড়া গাইনি বিভাগের জন্য সার্বক্ষণিক একজন বিশেষজ্ঞ মহিলা চিকিৎসক নিয়োগের দাবী জানিয়ে আসলেও কোন গাইনী চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে ডেলিভারির জন্য আসা জটিল প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার জন্য অন্যত্রনিয়ে যেতে হয়। ডাক্তার সংকটের পাশাপাশি অধিকাংশ নার্স ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পদ এখানে শূন্য রয়েছে। হাসপাতালটি ১৯৭২ সালে নির্মাণ করা হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত মাষ্টার প্ল্যানের আওতায় এনে কোন ধরনের সংস্কার না করায় ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। ছাদ থেকে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড ও বিভিন্ন বিভাগে বর্ষা মৌসুমে পানি ছেয়ে পড়ে। হাসপাতালে ড্রেনেজ সমস্যা থাকায় সঠিক ভাবে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না, পানি বের হওয়ার রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই হাসপাতালের অভ্যন্তরে সবসময় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, ফলে পঁচা আবর্জনার দুর্গন্ধ বের হয়ে হাসপাতালের পরিবেশ দূষণ ও মশা-মাছির উপদ্রব দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অভ্যন্তরে পাকা রাস্তা, একেবারে ভেঙ্গে যাওয়ায় জনসাধারণের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের চারিদিকে সীমানার বাউন্ডারী অনেক জায়গায় নেই। হাসপাতালের ডাক্তার অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট রয়েছে। অনেক কর্মকর্তা তাদের পরিবার নিয়ে বাসাবাড়ীতে থাকেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সেলিম উদ্দিন এমপি সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে চিকিৎসা সেবার বেহাল চিত্র নিজ চোখে দেখেন। তিনি এ হাসপাতালকে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিতের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিম এমপির সাথে কথা বলবেন বলে সবাইকে আশ^স্ত করেছেন। মাস খানেক পূর্বে দীর্ঘ কয়েক বছর পর উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এলাকার সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক সহ সবাই উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবার বেহাল চিত্র তুলে ধরে বলেন, একমাত্র হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলে এখানকার মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে। বর্তমান সরকার চিকিৎসা সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কানাইঘাটবাসীও আধুনিক চিকিৎসা সেবার আওতায় আসবেন বলে সবাই মনে করেন। উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সিলেট জেলা আ’লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ জানিয়েছেন কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরাজমান সমস্যা তুলে ধরে এবং হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য তিনি খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ নাসিম এমপি, প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর ঢাকা, পরিচালক স্বাস্থ্য সিলেট বিভাগ বরাবরে লিখিত দরখাস্ত দাখিল করবেন। উপজেলা আ’লীগের আহ্বায়ক সাবেক পৌর মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করণের কানাইঘাটবাসীর প্রধান দাবী। বর্তমান সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সীমান্তবর্তী কানাইঘাটের মানুষ এখনও আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হলে এখানকার মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে। সিলেটের সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সিলেট জেলার কয়েকটি উপজেলা হাসপাতালকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় করা হয়েছে। কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ খায়রুল বাশার জানান, তিনি সম্প্রতি মাস খানেক পূর্বে হাসপাতালে যোগদান করেছেন। হাসপাতালটির বিরাজমান সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে প্রদত্ত সুযোগ সুবিধার মধ্য দিয়ে আমরা উপজেলাবাসী চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে এখানকার মানুষ আধুনিক চিকিৎসা সেবার অনেকটা সুযোগ পাবেন বলে জানান।