আমার মৃত্যু তোমার হাতে

49

জাহিদ অনিক

মনিটরে একটা কালো ওয়ালপেপার সাঁটিয়ে দিয়ে
নিজের মুখচ্ছবিটা দেখি নানাভাবে,
নিষ্পাপ চোখদুটো দেখে বড্ড অসহায় লাগে; মায়া লাগে নিজের প্রতি
অনেকটা সময় নিয়ে কেবল নিজেকেই দেখি।
নিজের হাসিটা মন দিয়ে খুব শোনাবার চেষ্টা করি
কি ছিল এই হাসিতে যা খুন করেছিল তোমাকে?
নাহ ধ্যাত ! কিছুই পাই না খুঁজে, ভয়াবহ মিথ্যেবাদী তুমি
আবার হাসি, এবার আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে অট্টহাসি দেই; বড্ড বিচ্ছিরি লাগে
আজকের মত এমন বাজে কর্কশ হাসি জীবনেও আমি হাসি নি।

একজোড়া বাদামী উলের মোজা পরে পায়চারী করি সারা ঘর
তারা ভরা রাতে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে থাকি,
পূবের ঘরে যেতেই শরীরে বিদ্যুৎ কমে আসে
থরথর করে কাঁপতে থাকে আপন শরীরটা!
রাত দিন ফুরবে খুব দ্রুতই বুঝতে পারি,
যতগুলো কবিতা ছিল মুখস্থ মনে মনে জপতে থাকি।

নিজেকে ভাঁড় সাজিয়ে বেঢপ একটা ক্লাউনের পোশাক পরে উপস্থিত হই
মাথায় একটা কালো মুখোস পরিয়ে দেই; ব্যাস ! এবার আমিই যমদূত !
আয়নায় আর দেখতে পাই না নিজেকে।
এটাই মোক্ষম সময়, বিদ্যুৎ চলে গেছে, দুর্দান্ত টাইমিং !
ঘড়িটা বন্ধ করে দিব এখুনি, সময় নেই ওটাতে আর।

আকস্মিক কালো মুখোশের মধ্যে দাঁতে দাঁতে ঝাঁকুনি ওঠে,
খুব ইলিশ ডিমের চচ্চড়ির কথা মনে পড়ে
মনে হল দাঁতের নিচেই ডিমের ঝুরি ভাঙছে !
মনে পড়ে কলমি শাকে চিংড়ি ভাজির কথা,
মুগের ডালের সাথে কাতলা মাছের মোড়া,
আহ! ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে।
মরে গেলে আমার আর এসব খাওয়া হবে না,
ভাবতেই পারি না মরে গেলে আমার আর রাঙ্গামাটি যাওয়াটাই হবে না!

এরকম অজস্র বাহানা বানিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি আরও কয়েক কোটি বছর,
আবার কোন এক অমাবস্যা রাতে তুমি আমার হাত দুটি খুঁজবে, সেই আশায় আবারো বেঁচে থাকি।
আমি নিশ্চিত, মরার পরে ঠিকই তুমি আমায় পেতে চাইবে
প্রেমের এই অসহ্য কপটতা আর ন্যাকামিটা কিছুতেই আমি সহ্য করতে পারব না।

আমাকে ছাড়া তুমি ভাল থাকবে এটা ভাবতেই পারি না, ভাবলেই পাপে ঘামতে থাকে শরীর ।
কথা না হোক, দেখা না হোক! নাই বা হোক চিঠি চালাচালি !
আমি জানি, বেঁচে আছি এটা শুনতে পেয়েই প্রচণ্ড সুখে থাকবে তুমি
আমি মরে গেছি এই শোক সংবাদ তোমার কাছে পৌঁছাক; চাই না আমি।
নিজেকে নিঃশেষ করার মত এমন বীভৎস কাজ কিছুতেই করতে পারব না,
তোমাকে ভাল বেসে বেসে বড্ড ভীতু আর কাপুরুষ বনে গেছি
নিজেকে যে ভালবেসেছি তোমার থেকেও বড্ড বেশি।