হবিগঞ্জ থেকে সংবাদাতা :
৩ দিন মর্গে পড়ে থেকে পচন ধরার পর অবশেষে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হলো হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার শিশু নাঈমা’র মৃতদেহের। শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের ৫ ডাক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে। শিশু নাঈমা’র মৃতদেহ নিয়ে পুলিশ ও ডাক্তারের রশি টানাটানির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। গত বুধবার বিকেল ৩টার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে উপজেলার সোয়াইয়া গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে নাঈমা আক্তার শামীমা। সে স্থানীয় সোয়াইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। বাড়ি ফেরার পর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি নাঈমাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশে খালের কাছে কচুরিপানায় ঢাকা অবস্থায় তার নিথর পড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে বাহুবল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) বিশ্বজিৎ দেব এর নেতৃত্বে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে পরদিন বৃহস্পবিার হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। পুলিশ ছুরতহালে লাশের গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই বলে উল্লেখ করে। কিন্তু মর্গে ময়না তদন্ত করতে গিয়ে লাশের গলা ও পেটে আঘাতের চিহ্ন দেখে থমকে দাঁড়ান ডাক্তার। আটকে যায় ময়না তদন্ত প্রক্রিয়া। বিড়ম্বনায় পড়েন লাশের স্বজনরা। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের আর এম ও ডা. বজলুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ময়নাতদন্ত করতে গেলে ছুরতহাল রিপোর্টে গড়মিল দেখতে পান। এ কারণে তিনি ময়নাতদন্ত করেননি। শুক্রবার ডা. দেবাশীষ দাসও একই কারণে ময়নাতদন্ত করেননি। এদিকে, নিহত নাঈমার পিতা ফরিদ মিয়া প্রতিবেদকে আহাজারি কন্ঠে বলেন, আমার কন্যাকে হত্যা করে লাশ গোপন করার চেষ্টা করেছিল দুর্বৃত্তরা। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। তার অভিযোগ দুর্বৃত্তরা পুলিশকে বশীভূত করে ছুরতহাল রিপোর্টে গড়মিল করেছে। তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ের লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ছুরতহালে তা উল্লেখ না করায় ডাক্তাররা তার ময়না তদন্ত সম্পন্ন করতে রাজি হয়নি। এ কারণে ৩ দিন ধরে লাশ মর্গে পড়ে থেকে পঁচন ধরেছে। আর আমি ও আমার স্বজনরা মর্গের পাশে অনাহারে-নির্ঘুম সময় কাটিয়েছি। তিনি বলেন, খুনিদের পাশাপাশি ময়না তদন্ত নিয়ে আমাকে হয়রানীকারীদের বিচার চাই। অপরদিকে, নাঈমার লাশের ময়নাতদন্ত নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে শুক্রবার রাত ৮টায় সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী ৫ সদস্যের ময়নাতদন্ত বোর্ড গঠন করেন। অবশেষে বোর্ডের সদস্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.বজলুর রহমান, মেডিকেল অফিসার ডা. হালিমা নাসরিন, ডা. দেলোয়ার হোসেন, ডা. দেবাশীষ দাস ও ডা. মিঠুন রায় এর তত্বাবধানে গতকাল শনিবার দুপুরে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়না তদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে সোয়াইয়া গ্রামে নিহতের লাশ দাফন করা হয়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী বলেন, সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হয়েছে। ৫ ডাক্তারের বোর্ড নিহতের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেছেন ।