গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
জাফলংয়ে বসত বাড়ি উচ্ছেদের আতঙ্কে রয়েছে কয়েক শতাধিক পরিবারের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বসত ভিটা উচ্ছেদ হওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম দিন রাত পার হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্ধাদের। পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি রক্ষায় ইতিমধ্যে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিক্ষোভ সমাবেশও করছেন তারা। সূত্রে জানা যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চৈলাখেল পঞ্চম খন্ড মৌজায় ১নং খতিয়ানের সাবেক ৯১ নং দাগে প্রায় ১শ’ ১৩.০৯ একর ভূমি রয়েছে। সেই ভূমিতে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময় থেকে কয়েক শতাধিক ভূমিহীন ও মুক্তি যোদ্ধা পরিবারের লোকজন বসবাস করে আসছেন। সেখান থেকে ১৯৮৯ইং সনে ১৮.২৫ একর ভূমি শ্রেণী পরিবর্তন করে জেলা পরিষদের ডাক বাংলো ও কয়েকটি ভূমিহীন পরিবারের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। আর বাদ বাকি ভূমিতে দখল পূর্বক ভূমিহীন পরিবার গুলো শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছেন।
তফসিল বর্ণিত ভূমির প¦ার্শ হতে যা একই মৌজার অন্তর্গত ইতিপূর্বে অর্থনৈতিক জোন ও স্থল বন্দর এর নামে ভূমি অধিকগ্রহণ করা হয়। উল্লেখ্য যে তফসিল বর্ণিত ভূমিতে ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মন্দির, একটি শ্মশানঘাট, ২টি মাদ্রাসা, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টি মসজিদ এবং বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক পরিচালিত বিদ্যালয় রয়েছে।
সম্প্রতি সিলেট জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ওই এলাকায় একটি দৃষ্টি নন্দন পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছেন। ইতিপূর্বে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এ সংস্থা কর্তৃক নিয়োগকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) ওই ভূমি থেকে দশ একর ভূমি চিহ্নিত করেছেন। একই সাথে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে এ সংক্রান্ত একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। সে অনুযায়ী ওই জমি বিনা মূল্যে বরাদ্দের লক্ষ্যে তা সংরক্ষণ ও অনাপত্তি পত্র প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পর্যটন করপেররেশন থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকে ওই এলাকায় বসবাসরত ভূমিহীন পরিবারের লোকজনেরা বসত বাড়ি উচ্ছেদ হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।
এমতাবস্থায় চরম ক্ষতির আশংকা ও উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে এখানে বসবাসরত এসব পরিবারের মাঝে। স্থানীয়দের দাবী উচ্ছেদ না করে সরকারের পতিত পড়ে থাকা জমিতে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হোক।
এব্যাপারে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা মুক্তি যোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, জহির আলী ও আলীম মিয়া জানান স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকেই এখানে বসবাস করে আসছি। এখান থেকেইে মুক্তি যোদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু এখন শুনছি আমাদের বসত বাড়ি উচ্ছেদ করে এখানে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন যদি ভিটে মাটি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়। এর চেয়ে দুঃখ জনক আর কিছুই নেই। আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জীবনের বাকি সময়টুকু আমরা আমাদের বসত বাড়িতেই কাটিয়ে যেতে চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন মিয়া বলেন, এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন’র প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হলে অত্র এলাকার কয়েক শতাধিক পরিবারের প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ ভিটেহারা হয়ে পড়বে। পাশাপাশি শিক্ষা বঞ্চিত হবে কোমলমতি শিশু কিশোররা, আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতির সম্মুখিন হবে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই সর্বাত্মক বিষয় বিবেচনা করে তাদের বসতভিটা রক্ষায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মানবিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাকির হোসেন জানান সরকারের ভূমিতে সরকারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। এতে কারও কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। তাছাড়া যে ভূমিতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে সেখানে যদি প্রকৃতই কোন ভূমিহীন পরিবার থেকে থাকে তাহলে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।