শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কুলাউড়ায় তরুণীকে জবাই করে হত্যা করেছে বখাটে প্রেমিক লোকমুখে এ বিষয়টি চাউর থাকলেও ১০ জুলাই রাতে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে রেহানার পিতা আছকর আলীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেই বেরিয়ে এসেছে এ হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী। ঘাতক পিতা তাদের কাছে স্বীকার করেছেন কিভাবে তিনি নিজ হাতে তার নিজ মেয়েকে হত্যা করেছেন। কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয় গ্রামের লাল মিয়ার সাথে তার আমার মেয়ে রেহানার দীর্ঘদিন থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। যা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাকে (মেয়েকে) বার বার বারণ করেছি। কিন্তু আমার কথায় কর্ণপাত করেনি সে। শেষ মেষ রাগে, ক্ষোভে ছুরি দিয়ে নিজ হাতে জবাই করেছি রেহানাকে।
এভাবে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিলেন পাষন্ড পিতা আছকর আলী। তখন তার এমন বক্তব্য শুনে বিস্মিত হন অনেকেই। ধিক্কার জানান পিতা নামের এই পাষন্ডকে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) কানাই লাল চক্রবর্তী জানান, টিলাগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয় গ্রামের লাল মিয়ার সাথে প্রেম করার অপরাধে আছকর আলী পরিকল্পিতভাবে গলাকেটে (জবাই) হত্যা করে নিজ মেয়ে রেহানা বেগমকে। এই হত্যার দায় প্রেমিক লাল মিয়া ও তার শুভাকাক্সক্ষী বৈদ্যশাসনসহ পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন পৃথিমপাশা এলাকার কয়েক জনের উপর চাপানোর অপচেষ্টা চালান তিনি। এরই স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে সে নিজ হাতে, কপালে ও বামপিটে ব্লেড দিয়ে কেটে রক্তাক্ত করে। পিতার স্বীকারোক্তিনুযায়ী নিজ বাড়িতে জ্বালানি কাঠের ঘরের ভেতরে বালতির মধ্যে রাখা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করে। এ ঘটনার ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার আগেই পুলিশ হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছোড়া (ছুরি), ব্লেড ও পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গি নিহত রেহানার পিতা আছকর আলীর কাছ থেকে উদ্ধার করে এবং ঘাতক পাষন্ড পিতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত রেহানার পিতা মো. আছকর আলীর মেয়ের হত্যাকান্ডের দায় অন্যের উপর চাপাতে চাইলেও পুলিশি নজর ছিলো তার উপর। ১০ জুলাই রাতে পুলিশ স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুল মালিকসহ ইউপি সদস্যদের সহযোগীতায় রেহানার পিতাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আছকর আলী নিজের মেয়েকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এ ঘটনায় নিহত রেহানা বেগমের মা শাহানা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘাতক পিতা আছকর আলীকে ১০ জুলাই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯জুলাই রবিবার ভোরে উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের বাগৃহাল গ্রামে মো. আছকর আলীর মেয়ে রেহানা বেগম বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একই ইউনিয়নের আশ্রয়গ্রাম এলাকার রকিব আলীর ছেলে লাল মিয়া ভোরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে রেহানাকে মারধর শুরু করলে তার বাবা আছকর আলী বাধা দেন। এতে তাকেও ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে সে রেহানাকে জবাই করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন রেহানার পিতা আছকর আলী।