এক বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত মনে করেন ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ

কাজির বাজার ডেস্ক

আগামী এক বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। তবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকার করা এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভুত্থানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে ১৩ অক্টোবরের থেকে ২৭ অক্টোবর ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অব আমেরিকার ঠিক করে দেওয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ অ্যান্ড) প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইংয়ের মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সি এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপ থেকে জানা গেছে, এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ।
তবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে দেশের ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন চান দেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। আর ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ নাগরিক। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কত দ্রæত নির্বাচন হওয়া উচিত এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া শহরের জনগণের ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং গ্রামে বাস করেন তাদের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন চান। আর জরিপে অংশগ্রণকারী পুরুষদের ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ নির্বাচন চান এক বছরের মধ্যে।

রাজনগরে রাস্তা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১১

রাজনগর সংবাদদাতা

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের প্রেমনগর গ্রামে রাস্তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- মো. আছকির মিয়া (৬০), তাহের আলী (৫৫), ইশকার মিয়া (৬০), মোজাহিদ আলী (৫৩), তামিম আলী (১৬), কেনান মিয়া (৬৫), আছমা বেগম (৫০), মঙ্গল মিয়া (৬০), আব্দুল মুকিত (৫০), আপেল মিয়া (২৫), আলী হোসেন (৩০)। খবর পেয়ে সেনাবাহীনি ও রাজনগর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. হারুন আলীর সাথে সাধারণ মানুষের চলাচলের একটি রাস্তা নিয়ে প্রেমনগর, দক্ষিণ প্রেমনগর, সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মালিকোনা গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। রাস্তাটি নিজেদের মৌরুসী বলে হারুন আলী দাবি করে সেখানে বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। অপরদিকে চলাচলকারী লোকজন এটিকে সরকারী বলছেন। এ নিয়ে গ্রামবাসী রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগও করেছেন। বিষয়টি নিষ্পতি করতে সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ওই এলাকায় সরেজমিন গিয়ে উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে তার অফিসে যেতে বলেন। কিন্তু কেউ সেখানে না যাওয়ায় বিষয়টি ঝুলে থাকে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ওই গ্রামে যান। তারা মনসুরনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে ঘটনাস্থলে যেতে কল দিলে তিনি সেখানে যান। সেখানে জাহাঙ্গীর আলমকে হারুন আলীর লোকজন গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত ৩টি গ্রামের মানুষের সাথে হারুন আলীর লোকজনের সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয়পক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন।
প্রেমনগর গ্রামের মো. আলিকুর রহমান বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এই রাস্তা দিয়ে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা চলাচল করছেন। এখন কয়েক বছর ধরে রাস্তাটি হারুন আলী নিজেদের দাবি করে বেড়া দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে দেন না। আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত দিয়েছি। তাকে বলার পরও সে কাগজপত্র নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) এর অফিসে যান না। শনিবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এলাকায় এলে তাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেন ও আমাদের উপর হামলা চালায়।
সাবেক ইউপি সদস্য হারুন আলী বলেন, রাস্তাটি আমাদের মৌরুসী। রাস্তার সাথে দুইদিকে সরকারী রাস্তা রয়েছে। তারা আগে গোপাট দিয়ে চলাচল করত। কিন্তু সেটি পরিত্যাক্ত হয়ে যাওয়ায় আমাদের রাস্তাকে তারা নিজেদের দাবি করে রাস্তাটি দখল করতে চায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে আমার বাড়িঘরে হামলা করে ৪ জনকে আহত করেছে। গরু ধরে নিয়ে গেছে। একটি গরুকে তারা দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে।
মনসুরনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সমস্যায় আমাকে কেউ ডাকলে যেতে হয়। রাস্তা নিয়ে হারুন আলী ও ৩ গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিবাধ চলে আসছে। কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আমাকে যেতে বললে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পরে হারুন আলীসহ তার লোকজন অকথ্য গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতার শিকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে সংঘর্ষ হয়।
রাজনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এমদাদুল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জেনেছি। এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, অভিযোগ পেয়ে এসি ল্যান্ড সেখানে গিয়েছিলেন। রাস্তা নিয়ে দুই পক্ষের দুই ধরণের দাবি। কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। মারামারি করে ঘটনার সমাধান তো হবে না। আমরা বিষয়টি দেখব।

৫ আগস্টের পর পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলাও হচ্ছে

কাজির বাজার ডেস্ক

গত ৫ আগস্টের পর পলাতক থাকা ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নিতে থানায় মামলা করা হচ্ছে। এমনকি তাদের গ্রেপ্তারে আলাদা টিমও গঠন করেছে পুলিশ। তারা যেন বিদেশে পালাতে না পারেন, সে জন্য বাতিল হচ্ছে তাদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের কাজে যোগদানের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হলেও ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগ দেননি। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, কাজে যোগ না দিয়ে পলাতক থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেনেএকজন ডিআইজি, সাতজন অতিরিক্ত ডিআইজি, দুইজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পাঁচজন সহকারী পুলিশ সুপার, পাঁচজন পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ জন এসআই ও সার্জেন্ট, ৯ জন এএসআই, সাতজন নায়েক এবং ১৩৬ জন কনস্টেবল। পলাতক কনস্টেবলদের মধ্যে দুজন নারী সদস্য রয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে চলে গেছেন এবং তাদের বড় অংশই ভারতে অবস্থান করছেন। সূত্র বলছে, পলাতক পুলিশ সদস্যদের তালিকায় শীর্ষে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ, যার নামে ৩৮টি মামলা রয়েছে। আরো রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, খন্দকার নুরুন্নবী, এস এম মেহেদী হাসান, সঞ্জিত কুমার রায় ও সুদীপ কুমার চক্রবর্তী; যাদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর একাধিক মামলা করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব পলাতক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নামে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা এখন আর পুলিশ বাহিনীতে নেই, তারা এখন সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, পলাতক ও চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে; যাতে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর জানান, পলাতক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবেই প্রথমে বেতন-ভাতা বন্ধ এবং পরে মামলা করা হচ্ছে।

১০ হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন

কাজির বাজার ডেস্ক

ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২ চা বাগানের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পরিবারের জীবিকার লড়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। ৬ সপ্তাহের উপরে তলব রেশন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আর্থিক সংকটের কারণে ন্যাশনাল টি কোম্পানি শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি ও রেশন দিতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিক পরিবারের মধ্যে চরম হতাশা ও অস্থিরতা চলছে। মাধবপুর উপজেলার দুটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এনটিসির ১২টি চা বাগান। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে চা বাগান বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের চা শিল্পের মারাত্মক প্রভাব পরেছে। চলতি মৌসুমে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এনটিসির চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেনসহ ৭ পরিচালক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে আটকে যায় ব্যাংক লোন। এতে চরম অর্থ সংকটে পড়ে কোম্পানিটি। বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিকদের তলব (মজুরি) ও রেশন। ৬ সপ্তাহ চলে গেলে ও কোন সুরাহা না হওয়ায় শ্রমিক পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে।
শ্রমিক নেতা খোকন পান তাঁতি জানান, প্রতি বুধবার এলেই চা বাগানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত। বিকেল হলেই চা বাগানের শ্রমিকরা লাইন ধরে তাদের সাপ্তাহিক রেশন ও তলব নিয়ে যেত। সেই টাকা দিয়ে বাগানের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ক্রয় করতেন। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের প্রচুর মালামাল বিক্রয় করতেন। এতে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য ছিল চাঙ্গা। কিন্তু ৩ মাস ধরে মাধবপুরে উপজেলার তেলিয়াপাড়া, জগদীশপুর চা বাগানসহ ১২টি বাগানে রেশন তলব বন্ধ রয়েছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) আর্থিক সংকট থাকায় তিন মাস ধরে শ্রমিকদের রেশন তলব (মজুরি) দিতে না পারায় এখন করুণ দশা চলছে প্রতিটি বাগানে। গত আগস্ট থেকে কোম্পানির তহবিলে অর্থের সংকট দেখা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ চা শ্রমিকের তলব রেশন সহ যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
গত ৩ মাস ধরে বাগানের সকল কর্মকাÐ বন্ধ হয়ে পড়েছে। রেশন তলব না পেয়ে শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে তীব্র অভাব অনটন। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চা বাগানে প্রতি সপ্তাহে শ্রমিক-কর্মচারীদের কয়েক লাখ টাকা নগদে পরিশোধ করা হতো। ওই টাকা দিয়ে তারা নিত্য প্রয়োজনীয় সব মালামাল ক্রয় করতো। এতে স্থানীয়ভাবে অর্থনীতি চাকা সচল ছিল। এখন হাজারো শ্রমিক পরিবারের হাত শূন্য। অনেক শ্রমিক পরিবারে দিনের পর দিন চুলায় আগুন দিতে পারে না। কেউ কেউ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে আহারের জন্য। বাগান নির্ভর ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে বসে আছে। বাগান চালু থাকলে সব পেশার মানুষের উপকার হত।
তেলিয়াপাড়া নোয়াহাটি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুবোধ বিশ্বাস বলেন, আগে প্রতিদিন সকালে বাগানের অনেক মানুষ বাজারে কেনাবেচা করতেন। এখন তাদের স্রোত কমে গেছে।
জগদীশপুর চা বাগানের শ্রমিক মিঠুন ঋষি বলেন, বাগান বন্ধ হয়ে পড়ায় শ্রমিক পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। চা বাগানের শ্রমিক নির্ভর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেচা কেনায় স্থবিরতা দেখা দিয়ে বিপদে পড়েছেন। সরকার জরুরিভাবে এ সমস্যা সমাধান না করলে কয়েক হাজার মানুষের জীবন আরও কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়বে।
এনটিসি মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, এনটিসি এর আগে এমন সংকটে পড়েনি। সংকট কাটিয়ে উঠতে কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ব্যাংক লোন হয়ে গেলেই সংকট কেটে যাবে। বাগান চালু থাকলে এর অর্থনৈতিক গতি প্রবাহ চলতে থাকে। এখন বাগান বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিক কর্মচারী, ব্যবসায়ীসহ সবাইকে বেগ পেতে হচ্ছে।

কমলগঞ্জে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠিত

পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ

নাচে গানে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ১২৫ তম বর্ষ বিদায় ও নতুন বর্ষবরণ খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠান উদযাপন করেছে। শনিবার দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান খাসিয়া ভাষায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’অনুষ্ঠিত হয়। খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সিলেট অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সকল পুঞ্জি প্রধানকে পাগড়ী পড়িয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।
সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। প্রাচীন খাসিয়া সমাজে দেবতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্য দিয়েই এ উৎসব পালিত হতো।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তবে এবছর আর্থিক টানাপোড়নে এ উৎসব উদযাপনে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, পরে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় সফলভাবে উৎসব সম্পন্ন হয়। খাসি সোস্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির উপর প্রাকৃতিক পরিবেশে চাউর গাছের পাতার ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ মঞ্চে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাওন মজুমদার, কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভ‚মি)ডি এম সাদিক আল শাফিন, লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ও খাসি সোস্যাল কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক ফিলা পত্মী, ডেবলছড়া পুঞ্জি প্রধান পিডিশন প্রধান, কমলগঞ্জ থানার ওসি(তদন্ত)শামীম আখঞ্জিসহ বিভিন্ন পুঞ্জি প্রধানগণ।
বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে খাসিয়ারা তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে আদি পাহাড়ি নৃত্য ও গান করেন। পাশাপাশি তাদের জীবিকার প্রধান উৎসব জুম চাষের এবং জীবন-জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন। উৎসব উপলক্ষে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
সেং কুটস্নেম উৎসবের দিনব্যাপী সবাই মিলে মাছ শিকার, ঐতিহ্যগত খেলাধুলা, ঐতিহ্যগত পোষাক পরিধান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে তারা আনন্দ ফুর্তি করে নিজেদের সামাজিক সম্পর্কে সুদৃঢ় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।

সিলেট এবং সুনামগঞ্জ সীমান্ত থেকে ১ কোটি ৬৫ লক্ষাধিক টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেট এবং সুনামগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৯ হাজার ৫ শত টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি)।
শুক্রবার দিবাগত রাত ও শনিবার ভোর রাতে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় শ্রীপুর, তামাবিল, সংগ্রাম, সোনারহাট, প্রতাপপুর, পান্থুমাই, উৎমা, মিনাটিলা, কালাইরাগ, কালা সাদেক এবং বাংলাবাজার বিওপি কর্তৃক অভিযান চালিয়ে এসব মালামাল জব্দ করে। শনিবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ হাফিজুর রহমান পিএসসি।
জব্দকৃত মালালের মধ্যে রয়েছে- ভারতীয় নিভিয়া সফট ক্রিম, গার্নিয়ার ম্যান ফেসওয়াশ, নিভিয়া বডি লোশন, মাইফেয়ারক্রিম, ডিইক্লো-এমট্যাবলেট, শীতের কম্বল, চিনি, চকলেট, সাবান, গরু, ফেন্সিডিল, বাংলাদেশী রসুন, শিং মাছ এবং অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারী নৌকাসহ অন্যান্য ভারতীয় পণ্য। যার আনুমানিক সিজার মূল্য ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ৯ হাজার ৫ শত টাকা।
সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ হাফিজুর রহমান পিএসসি বলেন, উর্ধ্বতন সদরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি’র আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বোত ভাবে অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকার অভিযান পরিচালনা করে চোরাচালানী মালামাল জব্দ করা হয়। আটককৃত চোরাচালানী মালামাল সমূহের বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

নিরীহ কারও নামে মামলা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার করতে হবে -আইজিপি

কাজির বাজার ডেস্ক

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলাসমূহ যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। নিরীহ কারও নামে মামলা হলেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শনিবার সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত মতবিনিময়সভায় সভাপতিত্বকালে মাঠ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।
ডিআইজি (অপারেশনস) মো. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভায় সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপার ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স প্রান্তে অতিরিক্ত আইজি মো. গোলাম কিবরিয়া, অতিরিক্ত আইজি মো. আকরাম হোসেন, অতিরিক্ত আইজি আবু নাসের মোহাম্মদ খালেদ, ডিআইজি মো. কামরুল আহসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি পুলিশ সদস্যদের মনোবল বাড়াতে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং জেলার পুলিশ সুপারদের ফোর্সের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করার জন্য নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যকে অযথা ভিকটিমাইজ করা হবে না। পুলিশ প্রধান জনগণের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, পুলিশকে জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের সমস্যা বা অভিযোগ শুনতে হবে এবং তদানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইজিপি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। কোনও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা মোকাবেলায় পুলিশকে ধৈর্যের সঙ্গে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করতে হবে।
সভায় পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম আরো জোরদার করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

কাজির বাজার ডেস্ক

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। চলতি বছরের নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীত অনুভ‚ত হচ্ছে এখানে। কমতে শুরু করেছে শীত অঞ্চল বলে খ্যাত শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা। সন্ধ্যা নামলেই এখানে ফিরে আসছে শীতের আমেজ। রাত যত গভীর হয় শীত টিনের চালে বা জানালার কার্নিশে তার প্রগাঢ় উপস্থিতির জানান দেয়।
সকালে এবং রাতে শীতের উপলব্ধি বেশি থাকলেও দিনের মধ্যাহ্নভাগে কিছুটা গরম অনুভ‚ত হচ্ছে। তবে বিকেল এবং সন্ধ্যা আসার সাথে সাথে গরম উধাও হয়ে কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে এই প্রত্যন্ত চা জনপদের চারদিক। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট শহরে শনিবারের নিম্ন তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মৌলভীবাজার জেলায় শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত জেলার একমাত্র আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার এর আবহাওয়া সহকারী মো. আনিসুর রহমান বলেন, শনিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে। এটিই শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এখন থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা। তখন শীত বেশি অনুভ‚ত হবে।
তিনি আরো বলেন, গত বছর নভেম্বরে যে টেম্পারেচার ছিল এ বছরও প্রায় এর কাছাকাছি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চলছে শ্রীমঙ্গলে। গত বছর ২০ নভেম্বরের দিকে টেম্পারেচার একটু বেশি ছিল, এ বছর একটু কম। ১৭ বা ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসই ছিল। গত বছর ২৬ নভেম্বর ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এবার তো দেখা যাচ্ছে যে ২৩ তারিখেই ১৪ তে নেমে এসেছে। গত বছরের সাথে তুলনা করলে মনে হচ্ছে টেম্পারেচার দ্রæত নামছে এবং আগামী কয়েকদিনে আরো নামবে।
সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত শ্রীমঙ্গলেই রেকর্ড করা হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশগত কারণে শ্রীমঙ্গলে ঠান্ডা সিলেটের অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি বলে জানান এই আবহাওয়া সহকারী।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জৈন্তাপুরের বড় গাং নদী তীরের কয়েকটি গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে

সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে জৈন্তাপুর উপজেলার বড় গাং নদী তীরের কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পথে। এতে করে অস্থিত্ব হারাতে বসেছেন নিজপাট ইউনিয়নের অন্তর্গত নিজপাট (ময়নাহাটি), নিজপাট (জাঙ্গালঘাট), পূর্বলক্ষীপ্রসাদ, রূপচেং, গোয়াবাড়ী এবং বড়গাং নদীর তীরবর্তী ভ‚মিতে বসবাসকারী লোকজন। গতকাল শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্তরা এমন অভিযোগ করেন। এতে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবীর আহমদ।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের দৌরাত্ম্যে তারা অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন। প্রতিকারের আশায় ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুফল পাননি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কারণে নদীতে বিলীন হতে চলেছে ঘরবাড়ি, টিলা, ফিশারী, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বাঁশঝাড়। তাই, নিরুপায় হয়ে এলাকাবাসী গত ২০ মে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। এ প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সিলেটের জেলা প্রশাসককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। রিট পিটিশন নং-৬৭৯৮/২০২৪ইং এর বাদী মো. আলাউদ্দীন ও আব্দুস সালামের আবেদনের প্রেক্ষিতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী সরজমিন তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবরে কপি প্রেরণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ নভেম্বর জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) এর কার্যালয়ে হাইকোর্ট কর্তৃক জারীকৃত আদেশের অনুলিপি নিয়ে গেলে ওই দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে তারা কোন প্রকার সহযোগিতা পাননি। বরং ওই দুই কর্মকর্তা জনগণের পক্ষ অবলম্বন না করে উল্টো তাদের হুমকীর সুরে বলেন, এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করলে তোমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুস সালাম আরো জানান, আমরা জানতে পেরেছি ২০১২ সালে সারী ও বড়গাং নদী থেকে বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কর্তৃক স্ট্রে অর্ডার জারি করেন। সেই স্ট্রে অর্ডারে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারী ও বড়গাং নদী থেকে সব ধরণের বালু ও খনিজসম্পদ উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ভুক্তভোগিরা বলেন, আমরা আমাদের ভিটেমাটি রক্ষায় প্রভাবশালী লিজ গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছি। অথচ, ২০১২ সাল থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা স্বত্তেও কি কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না তা বোধগম্য নয়। তারা ভিটে মাটি রক্ষায় সরকারের উর্ধতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ ম্মেলনে অন্যান্যেও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হর্নী গ্রামের মো. আলাউদ্দীন, নিজপাট গ্রামের গিয়াস উদ্দীন, রূপচেং গ্রামের সেলিম আহমদ, গোয়াবাড়ী গ্রামের চন্দন দাস, নিজপাট গ্রামের রুহুল আমিন, গোয়াবাড়ী গ্রামের অখছোছ মিয়া, নিজপাট গ্রামের মানিক মিয়া ও নজমুল ইসলাম, গোয়াবাড়ী গ্রামের আব্দুস সালাম।

পাশবিক স্বত্বাকে অবদমিত করে মানবিক শিক্ষাকে বিকশিত করাটাই মূল শিক্ষা : রেজাই রাফিন

 

জাতীয় শিশুকিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসর সিলেট মহানগরীর সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে শিশু সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ’র শহীদ সোলেমান অডিটরিয়ামে ফুলকুঁড়ি আসর সিলেট মহানগরীর পরিচালক ডা. রাজু আহমেদ’র ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপদেষ্টা সহ সভাপতি মুকতাবিস উন নূর।
ফুলকুঁড়ি আসর সিলেট মহানগরীর সহকারী পরিচালক আলি ফারহান আহমদ মাহি ও অগ্রপথিক তাহমিদ আল মাহাদী’র যৌথ সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আসরের প্রধান পরিচালক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সিলেটের ডাকের অতিথি সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, শাবিপ্রবির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা পরিচালক আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী ও কেন্দ্রীয় আসরের কিশোর থিয়েটার পরিচালক মোজাম্মেল হক।
প্রধান অতিথি মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, আমরা শিক্ষা বলতে বুঝি, কোনো রকমে পুঁথিগত সিলেবাস মুখস্ত করে ভালো ফলাফল করা। অভিভাবকরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসক, ব্যবসায়ী বানাতে চান। অথচ আগে ভালো মানুষ রূপে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই নৈতিক শিক্ষা দিতে না পারার কারণে অনেকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত মানুষ হতে পারেনি। মানুষের মধ্যে মানবিক ও পাশবিক স্বত্বা রয়েছে। পাশবিক স্বত্বাকে অবদমিত করে মানবিক শিক্ষাকে বিকশিত করাটাই হলো মূল শিক্ষা।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। সৎ ও নৈতিক গুনাবলী বিকশিত করে পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ রূপে গড়ে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠানে কুঁড়িদের গান, কবিতাসহ বিভিন্ন অনবদ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুখরিত এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন শাখা আয়োজিত প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে। এতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০০ জনকে পুরষ্কৃত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি