স্মরণ ॥ শামছুল আলম চৌধুরী

80

মাসুক উদ্দিন

Shmsul Amon Chyবিশিষ্ট সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ শামছুল আলম চৌধুরী একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন। যিনি সমাজ উন্নয়নের কারিগর হিসেবে আজীবন দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণ সাধনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সম্মানিত পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ভাইয়ের পিতা। শামছুল আলম চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত নন বরং একজন সৎ, ন্যায়, নিষ্ঠাবান সমাজসেবক হিসেবেও পরিচিত। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সিলেট ডায়াবেটিক সমিতি ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতি, জালালাবাদ চক্ষু হাসপাতাল, শহর সমাজসেবা পরিষদের সহ-সভাপতি, পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ সমিতি সিলেট ও জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি সিলেট এর সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সহ অসংখ্য সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্মকর্তা ছিলেন। সিলেটের সকল মহলের কাছে তিনি একজন অভিভাবকতুল্য, সজ্জন প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বাঙালী জাতির স্বাধিকার, স্বায়ত্বশাসন, সামরিক দুঃশাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ষাটের দশকের প্রথম সারির নেতা হিসেবে আপোষহীন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে আদর্শিক লড়াকু নেতা, কর্মী, সংগঠক হিসেবে তিনি তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করেছেন। কর্ম জীবনে এসেও তিনি তাঁর রাজনৈতিক আদর্শিক বিশ্বাস লালন করেই সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত সকল সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম ছিলেন। তাঁর কর্মময় জীবনের পরিধি এত বিশাল যা আজ ইতিহাসের বিষয়বস্তু মানুষ মাত্রই মরনশীল এটা চিরন্তন সত্য। শামছুল আলম চৌধুরী চাচাও চলে গেছেন সে পথে আমাদের সবাইকে ছেড়ে। বৃহত্তর সিলেটের সমাজসেবা অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব রাজপথের লড়াকু সৈনিক শামছুল আলম চৌধুরী কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সেখান থেকে আর কখনও ফিরে আসবেন না সিলেটের পিচঢালা রাজপথে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। শামছুল আলম চৌধুরী চাচার এই চিরপ্রস্থান সত্যিই বেদনাদায়ক। তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি সমাজের অবহেলিত গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন। তার চলনে বলনে তিনি ছিলেন সকলের শ্রদ্ধার পাত্র, ব্যক্তিত্বশালী, সাহসী একজন নেতা। সবদিক বিবেচনায় আমার কাছে মনে হয়েছে একজন সমাজসেবী মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। তিনি সত্যিকার অর্থেই সমাজসেবা অঙ্গনের আলোচিত একজন অভিভাবক। তাঁর ছিল আলাদা একটা ইমেজ। সে কারণে তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের সমাজসেবা অঙ্গনে অপরিহার্য এক মহান নেতা। শামছুল আলম চৌধুরী আপোষহীন মনোভাব, স্পষ্টভাষী বক্তা হিসেবেও সর্বত্র পরিচিত। তাঁর এ সকল কর্মের জন্য তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন সমাজসেবক। তিনি ছিলেন শান্তশিষ্ট সহনশীল, তীক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মানুষ। একজন সমাজসেবী আদর্শবান রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন সবার কাছে প্রিয়। দলমত নির্বিশেষে তিনি ছিলেন সকলের কাছে একজন গ্রহণ যোগ্য ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তাই তাঁর মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ ছাড়াও শোক সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট বিভাগের সমাজসেবা অঙ্গনের বড় মাপের প্রজ্ঞাবান মানুষের অভাব। আমরা তাঁর শূন্যতা আজীবন উপলব্ধি করবো। জাতীয় গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শামছুল আলম চৌধুরীর এই অসাধারণ অবদানের জন্য গোটা বৃহত্তর সিলেটবাসী তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে। শামছুল আলম চৌধুরী ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, শিক্ষাবিদ, অসাম্প্রদায়িক, সমাজ সচেতন ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তিত্বের অধিকারী মৃত্যু অনিবার্য জানা সত্বেও প্রিয় মানুষটির চলে যাওয়া আমাদের মাঝে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়। ধ্র“ব সত্য যে, এই পৃথিবীতে আসার ক্রমিক আছে কিন্তু যাবার বেলা কোন নিয়ম নেই। এ পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে যেতে হবে কিন্তু যারা কীর্তিমান তারা রবে মানুষের মনে মননে চিন্তা চেতনায় আদর্শে। তেমনি আমাদের সকলের প্রিয় ব্যক্তি শামছুল আলম চৌধুরী। ভালবাসার এ মানুষটির বিদেহী আত্মার জন্য শত সহস্র লাখো মানুষের প্রার্থনা বৃথা যাবে না। প্রতিদিন আমাদের কত আপনজন মারা যান, তাদের মৃত্যুর পর কতজনইবা তাদের জন্য কাঁদে তাদেরকে মনে রাখেই বা ক’জন। কিন্তু কেউ কেউ বেঁচে থাকেন তাদের কর্মগুণে। তারা তাদের জীবনের সুদীর্ঘ কর্মকান্ডে অমর হয়ে থাকেন অনাগত ভবিষ্যতের মাঝে। তাদেরকে আমরা বিদায় দেই শারীরিকভাবে কিন্তু তারা বেঁচে থাকেন জীবিত মানুষের হৃদয়ে। এমনি একজন মানুষ হলেন শামছুল আলম চৌধুরী। তিনি ছিলেন কর্মচঞ্চল, লোভ, হিংসা, অহংকার মুক্ত একজন সাদা মনের মানুষ। তিনি কখনো অন্যের ক্ষতির কথা চিন্তা করতেন না, কেউ যদি তার ক্ষতি করতো তবুও তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছে তিনি ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। তাদের সকল সমস্যা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও সাধ্যমত সমাধানের চেষ্টা করতেন। তিনি সব সময় সাদাসিধে জীবন যাপন পছন্দ করতেন এবং ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ধনী গরীবের ব্যবধান কমানোর। তিনি এককভাবে নয়, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার স্বপ্ন ছিলো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্থায়ী আবাসন করার যাতে তারা যে পরিমাণ মাসিক ভাড়া দিয়ে বাসা ভাড়ায় থাকে সেই টাকা দিয়ে তাদের নিজস্ব ঘর তৈরী করতে পারে। তিনি সব সময় দেশ ও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি অনুগত থাকতেন। নিজের অনেক শখ বিলাসিতা পরিত্যাগ করতেন শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে। তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখতেন দারিদ্রতা, ক্ষুধা, অশিক্ষা মুক্ত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তিনি সামাজিক কর্মকান্ডের প্রতি জোরদিতেন এবং অবহেলিত মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। অত্যন্ত প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন। এই মহান ব্যক্তিত্ব আমাদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকাবস্থায় গত ৬ নভেম্বর, ২০১৫ইং শুক্রবার রাত ১০টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুত্যুকালে তিনি ২ ছেলে, ২ মেয়ে, নাতি-নাতনী, আত্মীয়-স্বজন সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এই মানুষটির অসময়ে চলে যাওয়াকে কেউ মেনে নিতে পারেনি। তাই প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তার স্মৃতি ভেসে উঠে নয়নের মনিতে। পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের কাছে আমাদের আকুল আবেদন আল্লাহ পাক যেনো তাকে জান্নাতবাসী করেন। আমীন

লেখক : মাসুক উদ্দিন, কলামিষ্ট, এলএলবি অনার্স, লিডিং ইউনিভার্সি, সিলেট।