রাজার বুদ্ধিমান ছেলে

112

আবু মালিহা

এক দেশের রাজা ছিলেন খুব বীর বুদ্ধিমান এবং সৌভাগ্যবান। তার রাজ্যে কোন অভাব ছিল না। প্রজা সাধারণ খুব সুখে থাকতো তার রাজ্যে। প্রজা সাধারণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে রাত দিন কাজ করে যেতেন রাজা। কীভাবে প্রজা সাধারণ সুখে থাকবে সেই চিন্তায় রাজার ঘুম হতো না। তার সম্পদের কোন অভাব ছিলনা। বিশাল রাজ্য পরিচালনায় তার রাজ সভায় বেশ জ্ঞানীগুণী ও অভিজ্ঞ মন্ত্রী, উজির ও আমানারা ছিলেন। তারা খুব অনুগত থেকে রাজার সকল কাজে সহযোগিতা করতেন এবং রাজার যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারেও তারা পেরেশান থাকতেন। রাজার হাতি শালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া সহ সব ধরনের সুবন্দোবস্ত ছিল রাজকার্য পরিচালনায়। রাজার রানীও তাকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করতেন রাজকার্য পরিচালনায়। কিন্তু এতো সুখের মধ্যেও রাজার মনে একটা দুঃখ ছিল। কারণ রাজার বেশ বয়স হয়েছে। একদিন তো এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। তা তো সবারই জানা এবং রাজাও সেই চিন্তায় প্রহর গুণছেন। এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই রাজা ধরে নিচ্ছেন। কেউতো আর চিরকালের জন্য পৃথিবীতে আসে না। একদিন না একদিন তো পরপারের উদ্দেশ্যে সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে রাজার দুঃখটা ছিল অন্য জায়গায়। রাজার কোন যোগ্য সন্তান ছিলনা, যাকে পরবর্তী রাজা হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে। যার হাতে তার গড়া এ বিশাল রাজ্যটি পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দিতে পারেন। কেননা রাজার তিনটি ছেলের মধ্যে একটির মধ্যেও এমন কোন গুণ ছিলনা যার হাতে এ দেশের ভার তুলে দিতে পারেন। রাজার তিনটি ছেলের মধ্যেই অলসতা, অকর্মণ্যতা ও নির্বদ্ধিতা ছিল বিধায় রাজ তাদের কাউকে দিয়েই সেই ভরসা পেতেন না, যে কার হাতে দেশ পরিচালনার ভার তুলে দেয়া যায়। তবুও তো কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব দিতেই হবে। এ ব্যাপারে রানীও কম কষ্টে ছিলে না। তিনিও রাজার সাথে একই চিন্তা করতেন যে, কার হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেয়া যায়। একদিন রানী রাজাকে পরামর্শ দিলেন যে, তোমার ছেলেদের একটি পরীক্ষা নিয়ে নাও, দেশ পরিচালনায় কে যোগ্য হতে পারে। রাজা বললেন বেশ তো পরীক্ষা নেয়া হোক। একদিন রাজা তার তিন পুত্রকে ডেকে বললেন, বাবারা শোন, আমি তো বৃদ্ধ হয়েছি, আমার পরে তো তোমাদের কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে রাজ্য পরিচালনায়। তবে আমি ঘোষণা করার আগে তোমাদের পরীক্ষা নিতে চাই যে, তোমাদের মধ্যে বুদ্ধিতে এবং যোগ্যতায় কে বেশী উপযুক্ত এবং এ ব্যাপারে তোমরা প্রস্তুতি নিয়ে এসো। রাজা তখন যথাসময়ে তাদের ডেকে বললেন, আমাকে তোমরা প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে এমন জিনিস নিয়ে এসো যা আমার এ রাজ প্রাসাদের কোন কোন অংশ খালি না থাকে। এবং মাত্র তিন দিন সময় দিলাম। একথা বলে রাজা অন্দর মহলে চলে গেলেন। তিন দিন পর রাজ প্রাসাদে রাজা তার সভাসদ নিয়ে বসে আছেন এমন সময় তিনটি ছেলেকেই আসতে দেখলেন। এদের মধ্যে বড় ছেলে বিশাল ধন সম্পদ নিয়ে এসে রাজার সামনে হাজির করলো এবং বলল এই নিন এতে আপনার রাজ প্রাসাদ ভরে যাবে। অত:পর দ্বিতীয় ছেলে ১০০টি তেজী আরবীয় ঘোড়া এনে হাজির করলো রাজার সামনে এবং বলল আপনার রাজ্য পরিচালনায় এ ঘোড়াগুলো খুব কাজে লাগবে। রাজা দেখলেন, সব ছোট ছেলেটি খালি হাতেই রাজ দরবারে এসে হাজির হয়েছে। রাজা বললেন, কি ব্যাপার তুমি যে কিছুই নিয়ে আসোনি! ছেলেটি বিনয়ের সাথে বলল, মহাত্মন রাজা আমার জিনিসটি আপনাকে সন্ধ্যার পর নিয়ে আসবো। রাজা বললেন তাই হবে। রাজার প্রতিক্ষা শেষ হলো, সন্ধ্যার পর দেখা গেল তার তৃতীয় পুত্রটি রাজ দরবারে এসে মহামান্য রাজার সামনে অন্ধকার রাতে একটি মোমবাতিতে দিয়াশলাই ধরিয়ে দিয়ে বলল, জাঁহাপনা এই নিন আপনার জিনিস। যা দিয়ে আমি আপনার ঘর ভরিয়ে দিলাম। যা দ্বারা অন্ধকার দূর করতে পারেন এবং আলোতে মানুষ পথ চলতে পারে। রাজা তখন ছ্টো ছেলের বুদ্ধি দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন এবং রাজন্যবর্গ মিলে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। অত:পর স্থির সিদ্ধান্ত নিলেন দেশের ভার একমাত্র তার হাতেই তুলে দেয়া যায়। রাজা-রানী এবং সভাসদ তার বুদ্ধিতে খুব খুশি হলেন এবং মহাসমারোহে তার উপরই দেশ পরিচালনার উত্তরাধিকারী ঘোষণা দিলেন। অর্থাৎ রাজার মৃত্যুর পর সেই হবে দেশের রাজা। অত:পর রাজার মনে আর কোন কষ্ট রইল না।