সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ॥ গোয়াইনঘাটে অবাধে চলছে ভারত অনুকরণীয় ‘তীর’ খেলা

390

গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
সীমান্ত এলাকা হিসেবে খ্যাত গোয়াইনঘাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের একাদিক হাট বাজারে অবাধে চলছে সবর্স্ব খোওয়ানোর এক অভিনব জোওয়া নামক তীর খেলা। অনেকেই আবার মনে করেন তীর খেলা এটা আবার কেমন খেলা এটা কি কোন তীর-ধনুক খেলা নাকি? এরূপ কথা বিশেষ করে বলে থাকেন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। তারা বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করে অনেক সময় এমনটি মন্তব্য করে থাকেন। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজার ও গ্রামগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় কোন প্রকার তোয়াক্কা না করেই অবাধে চলছে এই ভারত অনুকরণীয় এই তীর খেলা। তীর খেলাটি মূলত ভারতের শিলংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এর মূল কেন্দ্র হচ্ছে ভারতের শিলং। এই খেলাটি বাংলাদেশে পরিচালিত হয় ভারতের শিলং থেকে  নিয়োগকৃত এজেন্টদের মাধ্যেমে। এরা প্রতিদিন বিকাল বেলা ভারতের শিলংএ মোবাইল ফোনের মাধ্যেমে খোজ নেন কোন সংখ্যার লটারী লেগেছে। তারপর তা মুহূর্তের মধ্যই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আর যারা তীর খেলার সংখ্যা কিনেন তখনোই তারা জানতে পারেন কে লটারী জিতেছেন। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ কোনদিন কেউ লটারী জিতলে তার লোভে পড়ে আরো আসক্ত হয়ে পড়ে এই খেলার প্রতি। এই খেলার নিয়মাবলী হচ্ছে ১-১০০ পর্যন্ত সংখ্যার ঘর থাকে সেখান থেকে একটি সংখ্যা কিনলে ১ টাকার বিনিময়ে ৭৫ টাকা হারে পাওয়া যায়। এরই মোহ/লালসায় পড়ে উল্লে¬খযোগ্যে হাটবাজার তথা এলাকার আপামর জনসাধারণ ১ টাকায় বিনিময়ে ৭৫ টাকা পাওয়ার আশায় প্রতিদিনই তীরের সংখ্যা কিনে থাকেন। এই খেলার সাথে জড়িত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই পথে নামার সামিল প্রায়। তারপরও উল্লে¬খযোগ্যে হাট-বাজার গুলোতে তীর খেলার বইয়ের এজেন্টরা নানা কৌশলে মানুষকে এই খেলার দিকে ধাবিত করছে। এই তীর খেলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এলাকার কিছু দালাল চক্র বলে জানা যায়।
সরজমিনে হাট-বাজারগুলোতে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, হোটেল রেষ্টুরেন্ট গুলোতে আগে যেখানে মানুষ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতো কিন্তু এখন আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে তীর খেলা। কে কত টাকার তীরের সংখ্যা কিনলো এবং কে কত টাকা পেল। বিশেষ করে যুব সমাজ শ্রমিকরা এই খেলার সাথে সম্পৃক্ততা বেশী। এই খেলার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ কর্মের প্রতি মনোনিবেশ হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ শ্রমিকরা। সারদিন শুধু তীর খেলার ধান্ধায় ব্যস্ত থাকেন। এর কারণে দিন দিন তাদের পারিবারিক অস্বচ্ছলতা বৃদ্বি পাচ্ছে। যখন পকেটে টাকা না থাকে তখন অনেকেই তাদের ঘরের আসবাপত্র বিক্রি করে এই তীর খেলার সংখ্যা (ঘর) কেনেন। আবার কেউ-কেউ চুরি ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। গত ছয় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় ২০/২৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে ফলে এলাকা বাসী অনেকটাই আতঙ্কগ্রস্ত। এর পেছনে তীর খেলাকেই দায়ী করছেন এলাকার সচেতন মহল।
সামাজিক সংগঠন প্রজন্ম জাফলংয়ের সভাপতি রিপন আহমেদ বলেন, দয়া করে আমাদের যুব সমাজকে এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। প্রকাশ্যে ঘুরে ঘুরে এজেন্টরা এই তীরের নাম্বার বিক্রি করছে।
এমতাবস্থা চলতে থাকলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্বি পাবে।
প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে একদিক স্মারকলিপি দেওয়ার পরও যেভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে তীরের নাম্বার বিক্রি করছেন তাতে করে অভিবাবক মহল তাদের সন্তানদের নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। এই তীর খেলা বন্ধ করতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবসী।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ এম এ হাই বলেন, তীরখেলা বন্ধ করতে প্রশাসনিক ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় দিনই তীর খেলার সাথে সম্পৃক্তদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক ভাবে তৎপর রয়েছে। তীর খেলার সাথে সম্পৃক্ত কাউকে পেলে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।