শ্রমিকলীগের দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে ॥ কানাইঘাটে অটোরিক্সা চালক নিহত, আহত ৭

60

Murder picture(1)কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট উত্তর বাজার সিএনজি স্ট্যান্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা শ্রমিকলীগের দু’গ্র“প ও শ্রমিক নেতাদের বলির শিকার হয়ে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন এক অটোরিক্সা (সিএনজি) চালক। গতকাল বুধবার সকাল অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে প্রকাশ্যে দিবালোকে উপর্যুপরি কুপিয়ে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৭ অটোরিক্সা চালক। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, কানাইঘাট উত্তর বাজার অটোরিক্সা (সিএনজি) স্ট্যান্ডের ভাগবাটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এবং স্ট্যান্ডের অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ এর সভাপতি ফিরোজ মিয়া ও উপ-গ্র“পগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর জের ধরে গতকাল বুধবার সকাল অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে ১০/১২ জনের একদল অস্ত্রধারী যুবক স্ট্যান্ডে চড়াও হয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যানেজার তাজুল ইসলাম ও নুর উদ্দিনের কাছ থেকে খাতাপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে স্ট্যান্ডের ফিরোজ মিয়া সমর্থিত শ্রমিকরা বাধা প্রদান করেন। এ সময় স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে আসা হামলাকারীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলে নির্মমভাবে নিহত হন নিরাপরাধ পৌরসভার রায়গড় গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র ফয়ছল আহমদ (২৫)। তাকে হামলাকারীদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসলে গুরুতর আহত হন স্ট্যান্ডের অটোরিক্সা চালক আব্দুল আহাদ (৩৫), ফয়সল আহমদ (৩০), ফয়ছল আহমদ (২৯) জয়নাল আহমদ (২৫)। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যরা অন্যত্র চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রক্তাক্ত অবস্থায় ফয়ছল আহমদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পুলিশ সিওমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান নিহত অটোরিক্সা চালক ফয়সল আহমদ কে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শত শত মানুষ তাকে দেখতে সেখানে ভিড় জমান। এ হামলার সাথে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিন সমর্থিত গ্র“পের শ্রমিকরা জড়িত রয়েছে বলে উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্ট্যান্ডের সভাপতি ফিরোজ মিয়াসহ নিহত ফয়সলের পরিবার, আহত অটোরিক্সা চালকরা জানিয়েছেন। ফিরোজ মিয়া জানান, জসীম উদ্দিন শ্রমিকলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উত্তর বাজার ও দক্ষিণ বাজার সিএনজি স্ট্যান্ডে নিয়ন্ত্রণ নিতে বিশৃঙ্খলা শুরু করে। সে অযথা অটোরিক্সা চালকদের হয়রানী এবং স্ট্যান্ড থেকে উৎকোচ দাবী করে আসছিল। তার অন্যায় আবদার না মানায় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গতকাল তার নেতৃত্বে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। ফিরোজ মিয়া ঘটনার সাথে জড়িত খুনীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন। কিন্তু, জসীম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্ট্যান্ডে হামলা ও নিহত অটোরিক্সা চালক হত্যার সাথে তার ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাতিহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া এ ঘটনার সাথে শ্রমিকলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। যারা করেছে তাদের চিহিন্ত করে বিচার করা হোক বলে জানান। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল চৌধুরী জানিয়েছেন, কানাইঘাট উত্তর বাজার স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রন নিয়ে দু’গ্র“প শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত অটোরিক্সা চালক ফয়সল আহমদের হত্যাকারীদের আটক করতে পুলিশ ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পরিস্তিতি শান্ত রয়েছে বলে তিনি জানান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারে নি। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশি অভিযানের কারণে উত্তর বাজার স্ট্যান্ডের অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা। পুলিশ বেশ কয়েকটি অটোরিক্সা সিএনজি আটক করেছে। এদিকে পোস্ট মেডাম শেষে গতকাল বুধবার রাত ৮টায় নিহত অটোরিক্সা চালক ফয়সল আহমদের জানাজার নামাজ বিষ্ণুপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় শত শত শোকাহত মানুষ শরীক হয়ে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।