মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

32

2_129720কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলার অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। এদিন বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। এ বদ্বীপের মানুষ স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। মুক্তিপাগল বাঙালির গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ।
ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ।
ভয়াল কালরাতের ধংসস্তূপ আর অগিণত লাশের ভেতর দিয়ে উদিত হয়েছে রক্তরাঙা সেই নতুন সূর্য। মৃত্যুভয় ঝেড়ে ফেলে সাহসী বাঙালি বুক পেতে দিয়েছিল হানাদারের ট্যাঙ্কের সামনে; গড়ে তুলেছিল প্রতিরোধ।
আজ থেকে ঠিক ৪৪ বছর আগে এমনই এক ভোরের আগেই পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালি জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের। এক সাগর রক্তের
বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৪৫তম দিবস। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালি সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল।
২৫ মার্চ কালরাত্রিতে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী সে রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাসংক্রান্ত বিবৃতিটি সর্বপ্রথম পাঠ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান। এর পর ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে ঘোষণা পাঠ করা হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ ছিল ‘…ডিক্লেয়ার দি ইনডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ। অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার কপি ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে হ্যান্ডবিল আকারে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়েছিল। এ ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল।
২৫ মার্চ সন্ধ্যারাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘ইয়াহিয়া খান সমস্যা সমাধানের জন্য সামরিক ব্যবস্থা বেছে নিলেন। আর এখানেই পাকিস্তানের সমাপ্তি হলো।’ রাত সোয়া ১টার দিকে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি ও এক লরি সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় এবং রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়া হয়।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) মহান স্বাধীনতা দিবসটি পালন করা হবে। সব ভবনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোয় উড়বে জাতীয় পতাকা। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমত নির্বিশেষে সেখানে হাজির হবে লাখো মানুষ। আজ সরকারি ছুটির দিন। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।