ছাতকের বাংলাবাজারে গমের বাম্পার ফলন

56

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
চলতি রবি মৌসুমে বাংলাবাজারে গমের বাম্পার ফলনে স্থানীয় কৃষক-কৃষানীদের মধ্যে বইছে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস। রূপা আমনের পর গমেরও ফলন ভালো হওয়ায় গম চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠছে এখানের কৃষক পরিবার গুলো। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সাহায্য সহায়তা ও পরামর্শ ছাড়াই কৃষকদের নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে গম সহ অন্যান্য রবি শস্য উৎপাদন করছে এখানের কৃষক-কৃষানীরা। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধান না থাকায় বাংলাবাজারের কৃষকরা আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারী বিভিন্ন সহায়তাও পাচ্ছেন না তারা। দোয়ারা উপজেলা কৃষি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বাংলাবাজার ও সুরমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের উৎপাদিত শাক-সবজী, রবি শস্য বৃহত্তর সিলেট বিভাগের লোকজনের চাহিদা পুরন করে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সর্বোচ্ছ সয়হায়তা প্রদান করা হলে এখানের উৎপাদিত শাক-সবজী ও রবি শস্য দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হত বলে কৃষকরা মনে করছেন। এতে এখানের কৃষক পরিবারগুলো উপকৃত হতো, পাশাপাশি দেশের চাহিদা পুরনেও নুন্যতম অবদান রাখা সম্ভব হতো। বাংলাবাজার ইউনিয়নের বড়খাল গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র কৃষক আব্দুল আওয়াল (৫৫) জানান, তিনি প্রতি বছরই কম-বেশী গমের চাষ করে থাকেন। চলতি বছরে বড়ইউরি মাঠে তিনি প্রায় এক একর জমিতে গমের চাষ করেছেন। নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে চাষাবাদ করে আসছি। সরকারী সুযোগ সুবিধা তেমন তিনি পান না। উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বিভাগ আছে কিনা তিনি জানেন না। চাষাবাদের ক্ষেত্রে এ কৃষক সরকারী সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। পূর্বে এ অঞ্চলে কৃষকরা প্রচুর পরিমানে গমের আবাদ করতো। গমের বাজার মূল্য ও ব্যবহার কমে যাওয়ায় এক পর্যায়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা গমের আবাদ কমিয়ে অন্যান্য রবি শস্য চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠে। গত কয়েক বছর ধরে এখানে বিভিন্ন ফসলের মাঠে বিছিন্ন ভাবে গমের চাষ আবারো শুরু করেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে গমের আবাদ ভাল হয়েছে বলে দাবী করেছেন কৃষক আব্দুল আউয়াল। বর্তমান বাজারে গমের মূল্য আশানুরোপ বলে গম চাষে কৃষকরা আবারো আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তিনি এ অঞ্চলের কোন কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিনেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে সরকারী সুযোগ সুবিধা পেলে তিনি আরো ব্যাপক হারে গমের আবাদ করতে পারবেন। তিনি ধান-গম ছাড়াও এ বছর মুলা, আলু, শীম, বাধা কপি, ফুল কপি, হাইব্রিড মরিছ, ধনিয়া, ডাটা, লাল শাক, লাই শাক, মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছেন বলে জানান। এসব শাক-সবজী বিক্রি করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন। বর্তমানে নালিয়া, পুইশাক, কুমড়া, ঝিংগা, সিছিংগা, ঢেঁড়শ ও কঁচু-লতি আবাদ করছেন। বর্ষা মৌসুমে এসব উৎপাদিত শাক-সবজী বাজার জাত করা সম্ভব হবে। বাংলাবাজার ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, বাংলাবাজার এলাকায় চলতি মৌসুমে ২৮ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। তিনি যে এলাকায় দায়িত্বরত, সেখানে গমের চাষাবাদ হয় মাত্র ৮ হেক্টর জমিতে। তিনি তার এলাকার কৃষকদের সরকারী সুযোগ-সুবিধা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন। যে সকল কৃষকরা তার কাছে আসেনি তারাই রয়েছে বঞ্চিত। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, দোয়ারার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাটি গম চাষে অত্যন্ত উপযোগী। এখানে গম চাষের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় এলাকা। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে এখানের কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করছি। বিছিন্ন ভাবে কেউ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে পরবর্তীতে এদেরকে কৃষি বিভাগের আওতায় আনা হবে।