পালসার মোটরসাইকেল না দেওয়ায় ভেঙ্গে গেলো বিয়ে

85

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগরে বরের দাবিকৃত পালসার মোটর সাইকেল না দিতে পারায় ভেঙ্গে গেলো (ছদ্মনাম) রুমার বিয়ে। গত বুধবার বিকাল থেকে বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরা রুমাদের বাড়িতে মিলিত হয়ে চলছিল বিয়ের মহা ধুমধাম। রুমার বাবাও মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ব্যস্ত কারণ বৃহস্পতিবার তার আদুরের কন্যার বিয়ে। বুধবার বিকাল থেকে সিএনজি বাড়া করে বাড়ি থেকে কমিউনিটি সেন্টারে একাধিকবার যাতায়ত করছেন। বিয়ের বাজার করতে পাঠিয়েছেন মুরব্বিদের । রাতে গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে রুমার মা-বাবাসহ সবাই ব্যস্ত বিয়ের আয়োজন নিয়ে। হঠাৎ বাজারে যাওয়া মুরব্বিদের মধ্যে মোবাইল ফোনে রুমার বাবাকে জানালেন পালসার মোটর সাইকেল কিনে না দিতে পারায় বর পক্ষ চলে গেছে বিয়ে হবে না। এমন খবর শুনার পর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে রুমার বাবার। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পরেন তিনি। সারা দিনের এত আনন্দ আয়োজনের মধ্যে গোটা বাড়িতে হঠাৎ নেমে এল নীরবতা। কনের বাবা-মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বুধবার রাতে ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহ পুর গ্রামের আ’লীগ নেতা আজল মিয়ার পুত্র যৌতুক লোভী রাশেদ মিয়া কনের পিতার কাছে দাবিকৃত পালসার মোটর সাইকেল না পাওয়ায় বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ায় পার্শ্ববর্তী কনের বাড়িতে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়ের আব্দুল্লাহ পুর গ্রামের আ’লীগ নেতা আজল মিয়ার পুত্র রাশেদ মিয়া (২৭) এর সাথে  পার্শ¦বর্তী গ্রামের  ছদ্মনাম রুমা বেগম (২১) এর সাথে গতকাল বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন ধার্য ছিল। বিয়ের দিন তারিখ হওয়ার পর বরে যৌতুক লোভি পিতা আজল মিয়া কনের পিতার কাছে প্রস্তাব করেন প্রথম পুত্রের বিয়েতে ডিসকভারী  মোটর সাইকেল পেয়েছেন। ২য় পুত্রের বিয়েতেও সাইকেল দাবি করেন। এমতাবস্থায় কনের পিতা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে  আজল মিয়ার দাবিকৃত সাইকেল কিনে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে গ্রামের এক প্রবীণ মুরব্বির মাধ্যমে মোটরসাইকেল কেনার জন্য ১ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন বরের পিতার নিকট। এ সময় যৌতুক লোভী বরের পিতা আজল মিয়া টাকা রেখে বলেন বুধবার স্থানীয় গোয়ালাবাজারে বিয়ের বাজার করার জন্য আসার দাওয়াত দেন। বরের পিতার কথা অনুযায়ী কনের পিতা নিজে বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত থাকায় মুরব্বিদের বাজারে পাঠান। মুরব্বিরা বাজারে এসে বর রাশেদ ও তাদের নিকট আত্মীয়দের সাথে মিলত হন। এ সময় বরের পক্ষের এক আত্মীয় কনের পক্ষের মুরব্বিদের কাছে সাইকেল বাবত আরও দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেন। মুরব্বিরা বর রাশেদকে বলেন এ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে জানালে যৌতুক লোভী রাশেদ বলে পালসার সাইকেলের দাম দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা তাই আরও দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে। এ সময় কনের পক্ষের লোকজন দের লক্ষ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গে সে তাঁর আত্মীয়দের নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান। এবং বলেন বিয়ে হবে না পালসার মোটর সাইকেল না পেলে আমি বিয়ে করব না। এ সময় কনের পক্ষ পূর্বের দেয়া ১ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলে সে বলে কিসের টাকা পারলে নিয়ে নিও।
কনের বাবার অভিযোগ, বুধবার সন্ধ্যায় আমি যখন বিয়ের আয়োজন নিয়ে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে ব্যস্ত এ সময় বাজারে যাওয়া মুরব্বিদের মধ্যে একজন আমাকে মোবাইল ফোনে জানান ১ ঘন্টার মধ্যে বরকে আড়াই লক্ষ টাকা দামের মোটরসাইকেল কিনে দিতে পারলে বৃহস্পতিবার বিয়ে হবে। অন্যথায় এ বিয়ে হবে না, এ সময় আমি বরের পিতা আজল মিয়াকে মোবাইল ফোনে হাতে-পায়ে ধরে  অনুরোধ করি আমি আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে দিব। এর পরও আজল মিয়া উত্তেজিত হয়ে পালসার সাইকেল না দিতে পারলে বিয়ে হবে না বলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কনের মা জ্ঞান হারা হয়ে বিছানায় রয়েছেন। কনে রুমা কান্না-কাটি করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন ।
বর বর রাশেদ মিয়া  বলেন, ‘আমি তো বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কনের পিতার রাজি না হওয়া বিয়ে হয়নি। এখানে আমার কি দোষ মোটর সাইকেল কনের পক্ষে দিবে এটাতো আগেই ঠিক ছিল। এ সময় রাশেদের পিতার সাথে আলাপ করতে চাইলে ফোন কেটে দেন।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মুরসালিন বলেন এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।